সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ সুদীর্ঘ চাকমা, পিসিপি দীঘিনালা সরকারি কলেজ কমিটির সাবেক সভাপতি শহীদ সুখেন চাকমা, পিসিপি দীঘিনালা সরকারি কলেজ কমিটির সাবেক কর্মী শহীদ গুনেন্দু চাকমা ও সাবেক যুব নেতা শহীদ জীবন চাকমার ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদর ও পানছড়িতে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।
খাগড়াছড়ি
আজ সকাল (১২ই মার্চ ২০২২) ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পনের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার আনুষ্ঠানিকতা আরম্ভ হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ জনসংহতি সমিতি, মহিলা সমিতি, যুব সমিতি ও পিসিপি’র বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেন। অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়।
এরপর পার্টির জেলা কার্যালয়ের কক্ষে স্মরণসভা করা হয়। স্মরণসভায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রী ঝিমিট চাকমার সঞ্চালনায় ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমার সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিন্ধু কুমার চাকমা। আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা, জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা, জনসংহতি সমিতি মাটিরাঙ্গা থানা কমিটির সভাপতি শ্রী দীপু চাকমা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীমতি ববিতা চাকমা প্রমূখ।
স্মরণসভার শুরুতে শহীদদের স্মৃতিচারণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী জগদীশ চাকমা।
স্মরণসভায় বক্তারা সুদীর্ঘ চাকমার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বক্তারা বলেন, সুদীর্ঘ চাকমা শুধু জনসংহতি সমিতি’র নেতা ছিলেন না পার্বত্য চট্টগ্রামের মেহনতি জুম্ম জনগণের সম্ভাবনাময়ি এক উদীয়মান নেতা ছিলেন। সুদীর্ঘ চাকমা তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নে। এরপর তিনি যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে জড়িত হন একসময় তিনি পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। বিশেষ করে তিনি পাহাড়ের ছাত্র-যুবদের কাছে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। তার অমায়িক আচরণ, গোছালো বক্তব্য ও সাংগঠনিক দক্ষতা-যোগ্যতা তাকে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। জনসংহতি সমিতির বিভক্তির পর পাহাড়ের ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত যখন চরমে তিনিই বোধয় সেই ব্যক্তি যিনি অত্যাধিক বেশি কথা বলেছেন এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে। তিনিই সর্বাধিক আওয়াজ তুলেছিলেন এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে। যে মানুষটা সর্বাধিক কথা বলেছিলেন ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে সেই মানুষটার প্রাণই গেল সেই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে।
তরুণদের মাঝে তার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিল তিনি নিজেই দেয়ালে দেয়ালে ছিকা মারতেন, পোস্টার টাঙাতেন, ব্যানার লিখতেন এবং অনুজদের এসব শেখাতেন। তার মাঝে কখনো নেতার ভাব ছিলনা, সাধামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন সুদীর্ঘ চাকমা।
বক্তারা আরো বলেন, তার জীবিতকালীন সময়ে ইউপিডিএফের ছাত্র সংগঠন, মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হত। তার আচরণ-ব্যবহার এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচীতে একাত্মা হয়ে অংশগ্রহণ করতেন। তার এসব বিভিন্ন গুণাবলির কারণে তিনি আজও প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে রয়েছেন।
শ্রী প্রীতি খীসা তার বক্তব্যে বলেন, ২০০২-২০০৩ সালে তিনি যখন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন তখন তার সভাপতি হওয়ার কথা ছিল। সন্তু লারমার কু-চক্রান্তে ও নির্দেশে তাঁকে সভাপতি পদ লাভ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তখন আমিও সেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে একজন সদস্য ছিলাম। সেই তখন থেকেই পার্টিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধের আভাস ছিল, যা পরবর্তীতে পার্টি বিভক্তির মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে এসেছিল।
এরপর স্মরণসভার সভাপতি ও পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজ্যময় চাকমার বক্ত্যবের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সন্ধ্যায় পিসিপির নেতাকর্মীরা শহীদদের অস্থায়ী শহীদ ভেদীতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন।
পানছড়ি
সুদীর্ঘ চাকমাসহ শহীদ তিন সহযোদ্ধার ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ পানছড়ি থানা শাখার উদ্যোগে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে।
আজ বিকাল ৫ঘটিকার সময় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি সুনয় চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রিমেশ চাকমার সঞ্চালনায় এ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ স্মরণসভায় পিসিপি, যুব সমিতি ও জনসংহতি সমিতির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, সুদীর্ঘ চাকমা জুম্ম ছাত্র সমাজের নব জাগরণের অনতম একজন পথ প্রদর্শক ছিলেন। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য জাহাজ, বিমান, গাড়িতে যেমনি ড্রাইভার থাকে সুদীর্ঘ চাকমাও জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের গন্তব্যে পৌঁছানোর একজন ড্রাইভার ছিলেন। মাওসেতুংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তারা বলেছেন, কিছু কিছু মৃত্যু বেলে হাঁসের পাখার মত হালকা আর কিছু কিছু মৃত্যু পাহাড় সমান ভারী। সুদীর্ঘ চাকমার মৃত্যুও পাহাড় সমান ভারী। কু-চক্রীরা তার মত একজন জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য পূরণের এক ড্রাইভারকে হত্যা করে জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের পথ আরও কঠিন করেছেন।
এরপর সন্ধ্যায় তার প্রতিকৃতিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত করা হয়।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ১২ই মার্চ সাংগঠনিক সফরে গিয়ে লংগদু দজর পাড়া এলাকায় তিন সহযোদ্ধাসহ সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে শহীদ হন সুদীর্ঘ চাকমা।