সারাদেশে ধর্ষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

খাগড়াছড়িদেশ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সারাদেশে চলমান ধর্ষণ, নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং যশোরের কেশবপুরে রাজেরুং ত্রিপুরাকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব কল্যাণ সংসদের যৌথ আয়োজনে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ রবিবার (২৩ মার্চ ২০২৫) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে খাগড়াছড়ি পৌর টাউন হল প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাগর ত্রিপুরার সঞ্চালনায়, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমল বিকাশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশটি ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি খঞ্জন জ্যোতি ত্রিপুরা স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয়ে সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শুভ্রদেব ত্রিপুরা, উইমেন রিসোর্স নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ও মানবাধিকার কর্মী নমিতা চাকমা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নবলেশ্বর ত্রিপুরা (লায়ন), খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি গীতিকা ত্রিপুরা ও কাজল বরন ত্রিপুরা, ছাত্র প্রতিনিধি কৃপায়ন ত্রিপুরা প্রমুখ।

বক্তারা অভিযোগ করেন, ১৩ মার্চ বেলা ১১টার দিকে রাজেরুং পরিবারের কাছে ফোন করে জানান, স্কুল ছুটি পেলেও হোস্টেল থেকে তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। উপরন্তু হোস্টেল পরিচালক খ্রিস্টফার সরকার ও ম্যানেজার প্রদীপ সরকার তাকে প্রলোভন দেখাচ্ছে ও অশালীন আচরণ করছেন। ১৪ মার্চ তার মৃত্যু হলেও হোস্টেল কর্তৃপক্ষ পরিবারকে কিছু জানায়নি। ১৫ মার্চ রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তার বাবা রমেশ ত্রিপুরা থানায় গেলে খ্রিস্টফার সরকার মিথ্যা অভিভাবক সাজিয়ে অন্য দুই ব্যক্তিকে সামনে আনেন।

মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সহপাঠীদের অভিভাবকরা হোস্টেলে প্রবেশ করতে চাইলেও গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় ছাত্র-জনতার সহায়তায় তিনজন সহপাঠীকে উদ্ধার করা হয়।

বক্তারা বলেন, হোস্টেল পরিচালক কর্তৃক জোরপূর্বক ধর্ষণের পর রাজেরুং আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। মৃত্যুর আগের দিন সহপাঠীরা তার শরীর থেকে পরিচালকের ব্যবহৃত পারফিউমের গন্ধ পেয়েছে এবং রাজেরুংকে আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় দেখেছে।

সমাবেশ থেকে, সারা দেশে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হোস্টেলগুলোতে ছাত্রীদের নিরাপত্তা জোরদার জোর দাবী জানানো হয়।

সমাবেশ শেষে আয়োজক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারলিপির মাধ্যমে নিন্মোক্ত দাবীনামা পেশ করা হয়ঃ

১. পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত খ্রিস্টফার সরকার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা;

২. ভিক্টিম রাজেরুং ত্রিপুরার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা;

৩. ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

উল্লেখ্য, ১৪ মার্চ যশোর জেলার কেশবপুর অনন্ত সড়ক সাহাপাড়া খ্রিস্টিয়ান আউটরিচ গার্লস হোস্টেলের শিক্ষার্থী রাজেরুং ত্রিপুরা (১৫)-এর মৃতদেহ উদ্ধার করে কেশবপুর থানা পুলিশ। রাজেরুং ত্রিপুরা বান্দরবানের থানচি উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের রমেশ ত্রিপুরার কন্যা। তিনি কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাকে ওই হোস্টেলে রেখে পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

Tags: , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

কাউখালী-কলমপতি গণহত্যার ৪৫ বছর
“আদিবাসী গণমাধ্যম” নিয়ে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের ৭ দফা সুপারিশমালা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu