শ্যামনগরে অবরুদ্ধ এক মুণ্ডা পরিবার

আদিবাসীদেশ

ভ্যানগার্ড ডেস্ক

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালী গ্রামে মুণ্ডা সম্প্রদায়ের এক পরিবারের বসতভিটার একটি অংশ জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রভাবশালীরা

সুন্দরবন-সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালী গ্রামে মুণ্ডা সম্প্রদায়ের একটি পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রভাবশালীরা জাল দিয়ে বসতভিটার একটি অংশ ঘিরে রাখায় পরিবারটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ঘর সরিয়ে নিতেও চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও বিচার পাচ্ছে না পরিবারটি।

ভেটখালী গ্রামের হিমচাঁদ মুণ্ডার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভেটখালী মৌজায় রাজেন্দ্রনাথ সরদার তার মালিকানাধীন সতেরো বিঘা সম্পত্তি দুই পুত্র হিমচাঁদ ও ফুলচাঁদকে সমানভাগে ভাগ করে দিয়ে যান। ১৯৭২ সালে ফুলচাঁদকে নাবালক ও নিঃসন্তান সাজিয়ে তার অংশের সব জমি লিখে নেয় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। বিভিন্ন সময় তারা হিমচাঁদের অংশের সিংহভাগ সম্পত্তি লিখে নেওয়ার পর ১৯৭৩ সালে অবশিষ্ট ৩৬ শতাংশ জমি লিখে নেন হযরত আলী নামে এক ব্যক্তি। আইনে মুণ্ডাদের সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরযোগ্য না হলেও প্রভাবশালী হযরত আলী মুণ্ডা পদবি পরিবর্তন করে প্রতারণার মাধ্যমে জমির দলিল করেন। এতদিন তিনি ওই সম্পত্তির বসতভিটার অংশ দাবি না করলেও হিমচাঁদের মৃত্যুর পর থেকে তা দখলে নিতে তৎপর হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে একাধিকবার সালিশি বৈঠক হয়।

মৃত হিমচাঁদ মুণ্ডার বড় মেয়ে কল্যাণী মুণ্ডা জানান, প্রায় আট বছর আগে তার মা এবং দুই মাস আগে বাবা মারা যান। অসুস্থ বাবার দেখাশোনার জন্য পাঁচ বছর ধরে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি পিতার বাড়িতে অবস্থান করছেন। তার অভিযোগ, বাবার মৃত্যুর পর পাশের জমির মালিক হযরত আলী তার বাবার স্বাক্ষর করা একটি দলিল দেখিয়ে সম্পত্তি কিনে নেওয়ার কথা জানান। এ সময় পাশের জমিতে গড়ে তোলা নিজস্ব চিংড়ি ঘেরে যাতায়াতের জন্য জায়গা দাবি করেন হযরত আলী।

কল্যাণীর স্বামী কমলেশ মুণ্ডা বলেন, বেঁচে থাকতে তার শ্বশুর হিমচাঁদ ওই সম্পত্তি বিক্রয়ের ব্যাপারে তাদের কোনো তথ্য দেননি। বরং মৃত্যুকালে তিন মেয়েকে বসতভিটা ভাগাভাগি করে নিতে বলে গেছেন।

এদিকে সত্য গোপনের পাশাপাশি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অন্যদের মতো হিমচাঁদের জমি লিখে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তারা বলেছেন, হযরত আলীসহ অন্যরা সরকারি নির্দেশনা না মেনে তথ্য গোপন আর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে এসব জমি লিখে নিয়েছেন। এখন বসতভিটা থেকে মুণ্ডা সম্প্রদায়ের লোকজনকে উচ্ছেদে ষড়যন্ত্র করছেন তারা।

অভিযোগের বিষয়ে হযরত আলী বলেন, ‘৪৭ বছর আগে আমি হিমচাঁদের কাছ থেকে জমি কিনি। মানবিক কারণে তাদের এতদিন বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। হিমচাঁদের মৃত্যুর পর চিংড়ি ঘেরে যাতায়াতের রাস্তার জায়গা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে নেট দিয়ে কিছু জায়গা ঘেরাও করে রেখেছি।’

মুণ্ডা সম্প্রদায়ের সংগঠন সুন্দরবন আদিবাসী মুণ্ডা সংস্থার (সামস) নির্বাহী পরিচালক কৃষ্ণপদ মুণ্ডা বলেন, ওই জমি হস্তান্তরযোগ্য নয়। কাগজপত্রেও ত্রুটি রয়েছে।

সাতক্ষীরা জজকোর্টের আইনজীবী আবুল কালাম বলেন, মু াদের সম্পত্তি অবৈধভাবে দলিল বা কোনো কাগজপত্রের মাধ্যমে হস্তান্তর দেখানো হলে তা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতিল করা যাবে। শুধু হযরত নয়, প্রভাবশালীরা মু াদের পদবি পরিবর্তন করে প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখল করে আসছে।

সূত্রঃ সমকাল

Tags: , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

বাঘাইছড়িতে সেটেলার বাঙ্গালী কর্তৃক জুম্মদের উপর হামলা
গুইমারায় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাগর চৌধুরীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu