ভরদ্বাজ মুনি’র শহীদের ৩ দশক আজ

খাগড়াছড়িপার্বত্য চট্টগ্রাম

সিএইচটি ভ্যানগার্ড ডেস্ক

শহীদ ভরদ্বাজ মুনির মরদেহ

পার্বত্য চট্টগ্রামের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ১ম শহীদ ভরদ্বাজ মুনি চাকমার আত্মবলিদানের ৩ দশক আজ। ১৯৯২ সালের ১৩ অক্টোবর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পিসিপি’র সমাবেশে যোগ দিতে আসেন ভরদ্বাজ মুনি চাকমা। সমাবেশে সেনা-সেটেলার বাঙালিরা কোন উস্কানি ছাড়াই হামলা চালায়। হামলায় শহীদ হন ভরদ্বাজ মুনি চাকমা। আহত হন প্রায় অর্ধ শতাধিক জুম্ম নরনারী।

১৯৯২ সালের ১৩ অক্টোবর ছিল পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ দীঘিনালা থানা কমিটির সম্মেলন এবং সম্মেলন উপলক্ষে বিশাল জনসভা। যা পূর্ব নির্ধারিত ছিল। সেদিন একটি বিশেষ মহলের উস্কানিতে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি আন্দোলন’ ও ‘একক বাংলা ত্রিপুরা গণ পরিষদ’ নাম দিয়ে দু’টি সদ্যজাত সংগঠন হরতাল আহ্বান করে। যা ছিল সম্পূর্ণ একটি মহলের পরিকল্পিত। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠাবে শত শত নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করতে থাকে। ঐসময় ভুঁইফোড়, সাম্প্রদায়িক ও বিশেষ মহলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারি সংগঠনগুলো সমাবেশে হামলা চালায়। ঘটনাস্থলে ৭০ বছরের বৃদ্ধ ভরদ্বাজ মুনি নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন।

মরদেহ কাঁধে ছাত্র পরিষদের নেতারা

হামলার পর বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা তাদের হীন চক্রান্তকে আড়াল করার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং শহীদ ভরদ্বাজ মুনি’র মরদেহ তারা তাদের আস্তানায় নিয়ে যায়। এরপর গভীর রাতে মরদেহ দীঘিনালা থানায় নেওয়া হয়। পরদিন অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর মরদেহ শনাক্তের পর পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা মাইনি নদীর তীরে তার দাহক্রিয়া সম্পন্ন করেন।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সম্মেলন ও সমাবেশ বানচাল করার জন্য ঘটনার সপ্তাহখানেক আগে থেকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের ডেকে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলা হয়। সমাবেশ বানচাল করে দেয়ার জন্য করণীয় সম্পর্কে অনেকে কাছ থেকে বিশেষ পরামর্শ চাওয়া হয়। এসব তৎপরতার সাথে যুক্ত ছিলেন তৎকালীন দীঘিনালা সেনানিবাসের লে. কর্ণেল ফরিদ, দীঘিনালা থানার সেকেন্ড অফিসার আব্দুল হাই, বিএনপির দীঘিনালা থানা শাখার সভাপতি জাফর আহম্মদ, শাপলা স্টুডিওর মালিক ও বিএনপি’র সাধারণ সম্পদাক মাসুদ রানা, ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস চৌধুরী, পাক্ষিক মাইনির বার্তাবাহক জাহাঙ্গীর আলম, ৩নং মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোনামিয়া ও তরুণ বিশ্বাস প্রমুখ ব্যক্তিগণ।

শশ্মানে মরদেহে আগুন দিচ্ছেন নেতৃবৃন্দ

ঘটনার পর পর দীঘিনালায় কারফিউ জারি করা হয়। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করে। ১৫ অক্টোবর ঢাকায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ দীঘিনালা হত্যাকান্ড ও আটক ছয়জন পাহাড়ী ছাত্র নেতার মুক্তির দাবীতে বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করে। সে সময়ে জনসংহতি সমিতি ও বাংলাদেশ সরকারের সংলাপ চলমান ছিল। ২১ অক্টোবর ১৯৯২ সালে একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, শান্তি-প্রক্রিয়া ও প্রস্তাবিত বৈঠক বিঘ্নিত হতে পারে এই আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন স্থানীয় রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে বৈঠক করে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলায় সব ধরণের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

উক্ত ঘটনার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সাঙ্গা হয়ে উঠে। ছাত্র-তরুণ সমাজ দুর্বারভাবে আন্দোলন চালিয়ে নিতে থাকে। নব্বই দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হওয়া এই ছাত্র আন্দোলনের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ছাত্র আন্দোলন তথা জুম্ম জনগণের জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে শহীদ ভরদ্বাজ মুনির আত্মবলিদান চির অমর ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

Tags: , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মহালছড়িতে এক মারমা গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টাঃ যুবক আটক
পিসিপি খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার ৯ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu