নানা আয়োজনে এমএন লারমা’র ৩৯ তম মৃত্যুদিবস ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস পালিত

খাগড়াছড়িপার্বত্য চট্টগ্রাম

সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি

প্রভাতফেরী

খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে নানা আয়োজনে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৯তম মৃত্যুদিবস ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।

আজ ১০ নভেম্বর ২০২২খ্রি, সকাল ৭.৩০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়াস্থ সূর্যশিখা ক্লাব জনসংহতি সমিতি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জুম্ম জনগণ মহাজন পাড়াস্থ সূর্যশিখা ক্লাব প্রাঙ্গনে জমায়েত হয়। এরপর কালো ব্যাজ ধারণ ও নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরীর মাধ্যমে চেঙ্গী স্কোয়ারস্থ মহান নেতা এমএন লারমা ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।

প্রভাতফেরী

পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন- পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটি, পিসিজেএসএস উপদেষ্টা কমিটি, পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি, খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটি, গুইমারা থানা কমিটি, পৌর কমিটি; মহিলা সমিতি; যুব সমিতি, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি। এছাড়াও সুশীল সমাজ প্রতিনিধিবৃন্দ, ২নং কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ, পার্বত্য যানবাহন মালিক সমিতি, জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দরা এমএন লারমার ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এরপর পুষ্পমাল্য অর্পণে সর্ব সাধারণের জন্য ভাস্কর্যটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

পুষ্পমাল্য অর্পণ করার আগ মুহুর্তে নেতৃবৃন্দ

পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে পুনরায় সূর্যশিখা ক্লাব প্রাঙ্গনে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। স্মরণ সভায় সাবেক পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমার সঞ্চালনায় এমএনলারমার ৩৯তম মৃত্যুদিবস ও জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্রী বিভূরঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাংঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রণব চাকমা। এছাড়াও স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্রী উদয় কিরণ ত্রিপুরা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীমতি রত্না তঞ্চঙ্গ্যাঁ, জনসংহতি সমিতির খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিন্ধুকুমার চাকমা, সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা, জনসংহতি সমিতির খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা, ২নং কমলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান শ্রী সুনীল চাকমা প্রমূখ।

স্মরণ সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী আরাধ্যপাল খীসা। শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে এমএনলারমাসহ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়। এরপর জনংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক এবং উদযাপন কমিটির সংগ্রামী সদস্য সচিব শ্রী সুধাকর ত্রিপুরার স্বাগত বক্তব্য প্রদানের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

স্মরণসভা

বক্তারা বলেন, পৃথিবীর অধিকার হারা মানুষদের প্রতিটি লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উদ্ভব আমরা লক্ষ্য করেছি, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্রও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। জুম্ম জাতীয় কুলাঙ্গার। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যতই শক্তিশালী হোক সত্য ও ন্যায়ের সাথে লড়াইয়ে তারা কোনদিন ঠিকে থাকতে পারেনা, গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্রও ঠিকে থাকতে পারেনি। মহান নেতা এমএনলারমা আজ প্রয়াত কিন্তু তার প্রদর্শিত পথ-আদর্শ আজও আমাদের মাঝে বিদ্যমান। সেই আদর্শকে বুকে ধারণ করে, শোককে শক্তিতে পরিণত করে এসময়ের গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্র সন্তু লারমার দল ও ইউপিডিএফকে(প্রসীত) কঠোর হস্তে দমন করে জুম্ম জনগণকে সাথে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন ও জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় এমএনলারমা মত, পথ, নীতি-আদর্শ লালন করার আহ্বান জানান। এমএনলারমার আদর্শে উজ্জিবিত হয়ে সমগ্র জুম্ম জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান প্রেক্ষাপট থেকে উত্তরণ ও জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়াস্থ এমএন লারমার ভাস্কর্য পাদদেশে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলন করা হয়। এতে জনসংহতি সমিতি’র নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।

ফানুস উত্তোলন

এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে পানছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি, নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় আজকের এই দিবসটি পালন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, সাবেক সাংসদ, জুম্ম জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত, জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, মেহনতী মানুষের পরম বন্ধু, প্রগতিশীল চিন্তাধারার ধারকবাহক মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৩৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস আজ। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর বিভেদপন্থী গিরি, দেবেন, পলাশ, প্রকাশ চক্রদের চক্রান্তে নির্মমভাবে ৮ সহযোদ্ধাসহ পানছড়ি উপজেলার খেদারাছড়া থুমে শহীদ হন মহান নেতা এমএন লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে প্রতিবছর তাদের আত্মত্যাগ ও এযাবতকালের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের স্মরণে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে।

Tags: , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

চুক্তির ২৫ বছর পূর্তিঃ চুক্তি বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবী
এমএন লারমা’র ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস আজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu