জেএসএস নেতা সুধাসিন্ধু খীসার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী

পার্বত্য চট্টগ্রাম

সিএইচটি ভ্যানগার্ড

জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যে কজন ত্যাগী ব্যাক্তি সাধারণ কর্মী এবং জনগণকে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে চলেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন শ্রী সুধাসিন্ধু খীসা। আজ তাঁর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২০ সালের ১০ই জুন দিবাগত রাত ১২ঃ০৫ মিনিটে পার্বত্য জট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাবেক সভাপতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সম্মানিত সদস্য ও জুম্মজনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আপোষহীন নেতা শ্রী সুধাসিন্ধু খীসা বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ৭৭ বছর বয়সে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

১৯৪৩ সালের ২১শে আগস্ট খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাধীন মহালছড়ি উপজেলার খুলারাম পাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রী যামিনি কুমার খীসা ও শ্রীমতী বেচাবি খীসার ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয় সন্তান ছিলেন।

১৯৫৯ সালে সিংগিনালা মিডল ইংলিশ স্কুল থেকে ৭ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে তিন বছর শিক্ষাজীবন ব্যহত হলেও সেই সময়ে তিনি নিজ গ্রাম খুলারামপাড়া এলপি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

১৯৬১ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের খবর পেয়ে ভবিষ্যতে চাকরিতে অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তৎকালীন সিংগিনালা স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত কুমার কার্বারী তাঁর সার্টিফিকেটের জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে দেন। (২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭)

১৯৬৬ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি স্কুল হতে মানবিল বিভাগে এসএসসি পাশ করার পরে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হন। সে সময়ের কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়নের সভায় ঢাকা থেকে আগত সংগঠনটির তৎকালীন ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন, অচিন্ত সেনগুপ্ত এবং ডঃ মাহাবুবুল্লাহ’র বক্তব্য শুনে তৎক্ষণাৎ ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহণ করেন।

১৯৬৮ সনে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজ কল্যাণ বিষয়ে ১৯৭১ সনে স্নাতক ও ১৯৭৩ সনে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত থাকার পাশাপাশি ১৯৬৮ সনে পাহাড়ী ছাত্র সমিতির রাঙ্গামাটি শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন।

শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে ১৯৭৩ সনে তিন মাসের জন্য ফ্যামিলি প্ল্যানিং বোর্ডে রিসার্চ অফিসার হিসেবে চাকরি করার পর সেটি ছেড়ে দিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে একটি জুনিয়র হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে অবৈতনিক প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই স্ময়ে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে আঞ্চলিক কমিটিতে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তারের সম্ভাবনা দেখা দিলে তিনি ১৯৭৫ সালের ২৭ আগস্ট পুরোপুরি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যেতে বাধ্য হন এবং সার্বক্ষণিক সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিভিন্ন সময়ে পার্টির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে সরকারের সাথে শুরু হওয়া সংলাপে পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি” সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

চুক্তি পরবর্তী সময়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হিসেবে তিনি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও উপজাতীয় রীতিনীতি বিষয়ক কমিটির কনভেনর হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের বিভিন্ন বৈঠকে ভূমিকা রেখেছিলেন। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন, আদিবাসী অধিকারের স্বীকৃতি, বৃহত্তর জুম্ম জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং বাম গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে যুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন জোরদার করার ক্ষেত্রে তিনি আমৃত্যু অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন।

Tags: , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

বাঘাইছড়ির নির্বাচনে জেএসএস (সন্তু) ও ইউপিডিএফ (প্রসিত) সশস্ত্র গ্রুফের কেন্দ্র দখলের মহড়া চলছে
বাঘাইছড়ির উপজেলা নির্বাচন ২য় বারের মত স্থগিতঃ বাঘাইছড়ি বাসীর প্রতিবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu