সিএইচটি ভ্যানগার্ড
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির ৯ম যৌথ জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“কালক্ষেপন না করে অতিসত্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণা করুন” আজ (২৭ অক্টোবর ২০২৩) শুক্রবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়া পাড়াস্থ মারমা উন্নয়ন সংসদ মিলনায়তনে এ যৌথ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন আজকের সম্মেলনের প্রধান অতিথি জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সুযোগ্য সহ সভাপতি শ্রী সুভাষ কান্তি চাকমা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদায়ী খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি ও আজকের সম্মেলনের সভাপতি শ্রী আরাধ্য পাল খীসা।
খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমার সঞ্চালনায় সম্মেলনে এমএন লারমাসহ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ ও মৌনব্রত পালন করা হয়। সম্মেলনে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন বিদায়ী খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী শোভা কুমার চাকমা। এরপর রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সামগ্রিক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব শ্রী জুপিটার চাকমা এবং খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সামগ্রিক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিন্ধু কুমার চাকমা।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী নেতা শ্রী কিরণ চাকমা। সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী সুনেন্টু চাকমা, যুব সমিতির কেন্দ্রী সাধারণ সম্পাদক শ্রী জগদীশ চাকমা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রত্না তঞ্চঙ্গ্যা। এছাড়াও দুই জেলার সকল উপজেলা থেকে প্রতিনিধিরা বক্তব্য প্রদান করেন।
সম্মেলনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন এবং আগামী দিনের সংগ্রামের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী অংশুমান চাকমা। এছাড়াও সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক বিভূ রঞ্জন চাকমা, বন্ধু প্রতীম সংগঠন গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের সভাপতি শ্রী শ্যামল কান্তি চাকমা। এছাড়াও পার্টির আরো কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ পিসিপি, যুব সমিতি, মহিলা সমিতিসহ সংগঠনের প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, আজকের সম্মেলন এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যখন বিশ্ব পরিস্থিতি তালমাতাল এবং যুদ্ধের উত্তেজনায় কাঁপছে বিশ্ব; বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট প্রখর থেকে প্রখর হচ্ছে। এমনি বাস্তবতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণও এর প্রভাবমুক্ত নয়। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা, অরাজক পরিস্থিতি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে তাদের জাতীয় ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষায় ক্ষেত্রে বেগ পেতে হচ্ছে। পার্বত্য চটগ্রামে প্রতিনিয়ত ইসলামি সম্প্রসারণবাদ, সমতল বাঙালি এনে জুম্মদের ভূমিতে বসিয়ে দিয়ে ভূমি আগ্রাসন, পর্যটনের নামে ভূমি আগ্রাসন, উন্নয়ন- সীমান্ত সড়কের নামে ভূমি আগ্রাসন, জুম্ম নারীদের উপর প্রতিনিয়ত যৌন সহিংসতা বেড়ে চলেছে। এমনি বাস্তবতায় জুম্ম জনগণ তাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে আগামী দিনে চুক্তি বাস্তবায়নের দুর্বার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ২৫ বছর হতে চলেছে কিন্তু চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জেলা পরিষদগুলো ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা নির্বাচনহীন পরিচালনা করা হচ্ছে যার ফলে জেলা পরিষদ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে আওয়ামীলীগ সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কখনো বাস্তবায়ন করেনি। সুতরাং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জুম্ম জনগণকে সজাগ থাকতে হবে বলে বক্তারা সতর্ক করেন।
নবাগত দুই জেলা কমিটির উদ্দেশ্যে নেতৃবৃন্দরা বলেন, আজকের সম্মেলনের মাধ্যমে একটি বলিষ্ঠ নেতৃত্ব গড়ে উঠবে এবং এই কমিটিগুলো জুম্ম জনগণকে সঠিক দিশা দেখাবে। আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে অগ্রসেনানি হয়ে কাজ করবে বলে বক্তারা মত প্রকাশ করেন।
পরিশেষে শ্রী বিমলেশ্বর চাকমাকে সভাপতি, শ্রী জুপিটার চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী জ্ঞানজীব চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্যবিশিষ্ঠ রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি এবং শ্রী শোভা কুমার চাকমাকে সভাপতি, শ্রী প্রীতি খীসাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী প্রত্যয় চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্যবিশিষ্ঠ খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
যৌথ দুই জেলা সম্মেলনে প্যানেল উপস্থাপন ও শপথ বাক্য পাঠ করান জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা।