বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবান পার্বত্য জেলার চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে শিকদার গ্রুপের পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন নির্মাণ বন্ধের দাবীতে লং মার্চ করেছে ম্রো আদিবাসীরা। আজ ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ রবিবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় চিম্বুক থেকে বান্দরবান জেলা সদর অভিমূখে লং মার্চ করেছে ম্রো আদিবাসীরা।
লং মার্চে ম্রো আদিবাসীরা ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবির মানুষ, ছাত্র-শিক্ষক ও অত্র জেলার সচেতন সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছে। লং মার্চ চলাকালীন সময়ে আন্দোলনকারীরা পুলিশি বাধাঁর মুখেও দমে যাননি। পুলিশি বাধাঁ অতিক্রম করে লং মার্চ সফল করেছে আন্দোলনকারীরা। জেলার বিভিন্ন দায়িত্বরত সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে যে, আগামী বান্দরবান পৌরসভার নির্বাচনের কারণে শহরের নিরাপত্তা বজায় রাখতে ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে লং মার্চে বাধাঁ দেয়া হয়েছে।
ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদের প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান ও ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে আন্দোলনকারীরা জেলা শহরের রাজার মাঠে এসে সমাবেশ করে। পাহাড়ে উন্নয়নের নামে, পর্যটনের নামে বিভিন্ন সময়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে ভূমি বেদখল করা হয়েছে, যার কারণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা হুমকির মুখে পড়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। চিম্বুকের পাহাড়ের এই পাচঁ তারকা হোটেল ও পর্যটন আদিবাসীদের জাতিগতভাবে ধ্বংস করার একটি নীলনকশা বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন। লং মার্চ থেকে আগামী দশ দিনের মধ্যে পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন নির্মাণ বন্ধের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। দশ দিনের মধ্যে এই নির্মাণ কাজ বন্ধ না হলে আবারও বৃহত্তর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশনের মাধ্যমে পাহাড়ে ভূমি সমস্যার সমাধান করার বিপরীতে উল্টো পর্যটন ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের নামে আদিবাসীদের ভূমি বেদখল ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, যা আদিবাসী জনগণের সাথে প্রতারণার সামিল ও চুক্তির লংঘন বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
লংমার্চ থেকে আন্দোলনকারীরা ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো: ১. চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ের পাঁচ তারকা হোটেল ও বিনোদনকেন্দ্র স্থাপনের প্রকল্প বাতিল করতে হবে, ২.অবৈধভাবে ভূমি দখলের বিরূদ্ধে প্রতিবাদকারী স্থানীয় পাড়াবাসী, জনপ্রতিনিধি, ছাত্র জনতাকে হয়রানি ও হুমকি-ধামকি প্রদান বন্ধ করতে হবে, ৩. চিম্বুকের ম্রোদের বংশ পরম্পরায় ভোগদখলীয় ভূমিতে যে কোন ধরণের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে, ৪. স্থানীয় মানুষের ভূমি দখল করে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র সম্প্রসারণের উদ্যোগ কোনোভাবেই গ্রহণ করা যাবে না, ৫. যে উদ্দেশ্যেই চিম্বুক পাহাড়ের ভূমি ব্যবহার করা হোক না কেন তা স্থানীয় কার্বারী, হেডম্যান, জনপ্রতিনিধি ছাড়াও চিম্বুক পাহাড়ের সকল পাড়াবাসীকে অন্তর্ভূক্ত করে আলোচনা করতে হবে।
২০২০ সালের ০৮ নভেম্বর কালচারাল শো-ডাউনের মাধ্যমে ম্রো আদিবাসীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে, এরপর থেকে ম্রো আদিবাসীরা আন্দোলন চলমান রেখেছে। ম্রো আদিবাসীদের ভূমি বেদখল করে পাঁচ তারকা হোটেল ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন বন্ধের দাবী জানিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও দেশের বুদ্ধিজীবি সমাজ বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু তারপরও এসব বিষয়ে কর্ণপাত না করে নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।