সিএইচটি ভ্যানগার্ড, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন আদিবাসী শ্রমজীবি কল্যান সমিতি চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির ৪র্থ সম্মেলন সম্পন্ন। আজ (২৯ অক্টোবর ২০২১) সকাল ১০ ঘটিকার সময় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের স্লোগান ছিল ” শ্রমজীবি মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসুন”, “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিবিরোধী সকল অপশক্তিকে প্রতিহত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ- বাস্তবায়নে শ্রমিক সমাজের বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলুন”।
সম্মেলনে বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সোহাগ চাকমার সঞ্চলনায় ও বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী অর্থ সম্পাদক শ্রী জ্ঞান বকুল চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক শ্রী প্রীতি খীসা; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক শ্রী প্রত্যয় চাকমা প্রমূখ। এছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরস্থ আদিবাসী শ্রমজীবি কল্যাণ সমিতির বিভিন্ন শাখা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দরাও উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের শুরুতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাসহ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মবলিদাকারী সকল বীর শহীদ ও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট শোক নিরবতা পালন করা হয়। সংগঠনটির নেতা জুয়েল ত্রিপুরার স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সম্মেলনের সূচনা করা হয়। বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক ছাত্রনেতা শ্রী রনি চাকমা, শ্রী আশিক চাকমা ও শ্রী অরবিন চাকমা; সংগঠনটির নেতা নিখিল চাকমা; বিশেষ অতিথি শ্রী প্রত্যয় চাকমা ও প্রধান অতিথি শ্রী প্রীতি খীসা।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আদিবাসীরা কর্মসংস্থানের জন্য বন্দর নগরীতে পাড়ি জমান। আদিবাসীদের বড় একটি অংশ গার্মেন্টস শিল্প ও বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা এসব সহজ সরল আদিবাসীরা বিভিন্ন সময় স্থানীয় বাঙ্গালি জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন সন্ত্রাসী কিংবা কলকারখানার মালিকদের কাছে হয়রানিসহ বিভিন্নভাবে প্রতারণার শিকার হন। বিশেষ করে আদিবাসী নারীরা যৌন নিপীড়নসহ লাভ জিহাদের মত বিভিন্নভাবে হয়রানির স্বীকার হন। আদিবাসী শ্রমজীবি কল্যাণ সমিতি প্রতিষ্ঠার পর হতে চট্টগ্রামে অবস্থানরত আদিবাসীদের বিভিন্নভাবে এসব সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে সহযোগীতা দিয়ে আসছে। শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায় কিংবা আদিবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে শ্রমজীবি সমিতি সবসময় একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে বক্তারা জানান।
বক্তারা আরও বলেন, শ্রমজীবি কল্যাণ সমিতি শুধুমাত্র শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নয় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সেখানকার শ্রমজীবি মানুষ ও সমতলের বিভিন্ন বাম সংগঠনসহ শ্রমিক সংগঠনগুলোর মাঝে জনমত গড়ে তুলতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তাঁরা শ্রমিকদের অধিকার আদায় ও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে আদিবাসী শ্রমজীবি মানুষদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
পরিশেষে প্যানেল কমিটি ঘোষণা করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি ও জেএসএস’র ঢাকা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক শ্রী প্রীতি খীসা। সবার সম্মতিক্রমে পুরাতন কমিটিকে বিলুপ্তি ঘোষণা করে শ্রী নিখিল চাকমাকে সভাপতি, শ্রী সোহাগ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও জুয়েল ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে আদিবাসী শ্রমজীবি কল্যাণ সমিতির ৩১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষাণা করা হয়। নবাগত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান সম্মেলনের প্রধান অতিথি ও জেএসএস’র ঢাকা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক শ্রী প্রীতি খীসা।
এরপর আজকের সম্মেলনের সভাপতি শ্রী জ্ঞান বকুল চাকমার সমাপনী বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।