ভ্যানগার্ড ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি প্রয়াত রাজেন্দ্র লাল চাকমা’র(৬৮) স্মরণে আজ ০৮ জানুয়ারি ২০২১ইং খাগড়াছড়িস্থ জোত মালিক সমিতির কার্যালয়ে শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজেন্দ্র লাল চাকমা বিগত ২০ ডিসেম্বর ২০২০ইং ভোর ৫ ঘটিকার সময়ে খাগড়াছড়িস্থ বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পিসিজেএসএস রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুরেশ কান্তি চাকমার সভাপতিত্বে ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুমেধ চাকমার সঞ্চালনায় সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা তার সংগ্রামী জীবনের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তৃতা রাখেন।
পিসিজেএসএস রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত শোক সভায় প্রধান অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমা, বিশেষ অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক প্রণব চাকমা। শোক সভায় আরো বক্তব্য রাখেন পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিন্ধু কুমার চাকমা, বাঘাইছড়ি থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জোসি চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কিরণ চাকমা প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আন্দোলনের ইতিহাসে তার মত সৎ, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী কর্মী খুবই কম লক্ষ্য করা যায়। ৭০ দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনের গণ জোয়ারের সময় তিনিও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হন। শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রাম চলাকালে তিনি যুস পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জুম্ম জনগণের দীর্ঘ দুই যুগের অধিক চলা সশস্ত্র সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ নিরসনে তার অবদান অনস্বীকার্য বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে তিনিও অস্ত্র সমর্পনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। এক এগারোর সময়ে জনসংহতি সমিতি বিভক্ত হলে তিনি সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বাধীন এমএনলারমা’র আদর্শিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র পক্ষ নেন। পার্টিতে তিনি কেদার বাবু নামে সর্বাধিক পরিচিত।
২০১০ সালে বাঘাইছড়িতে তিনি পার্বত্য চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ কর্তৃক অমানবিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। তারপরও তিনি দমে যাননি। নিরলসভাবে আমৃত্যু শ্রম দিয়ে গেছেন জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছেন ভাগ্যহারা, অধিকার বঞ্চিত পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের কল্যাণে। তার সংগ্রাম, ত্যাগের মহিমা, সততা ও আদর্শ পার্টিতে চির অমর হয়ে থাকবে এবং তার রাজনৈতিক জীবন সকলের অনুকরণীয় ও পাথেয় বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। ২০২০ সালে পিসিজেএসএস রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির ৪র্থ জেলা সম্মেলনে তিনি সভাপতির পদ লাভ করেন এবং আমৃত্যু জুম্ম জাতীয় আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন।
শোক সভার শুরুতে তার সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট শোক নিরবতা পালন করা হয় ও তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত ও প্রসীতপন্থী ইউপিডিএফ-সন্তু লারমা দলের সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে খাগড়াছড়িতে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তার বাড়ি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩৫নং বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বালুখালী গ্রামে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে এক মেয়েকে রেখে গেছেন।