সিএইচটি ভেনগার্ড,খাগড়াছড়ি
“নারী সহিংসতা প্রতিরোধসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে নারী সমাজ জেগে উঠুন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির অঙ্গ সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির ৫ম সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০ ঘটিকার সময়ে খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুরস্থ খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমা, দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন মহিলা সমিতি’র বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রীমতি কাকলী খীসা। সম্মেলনের শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠের মাধ্যমে একমিনিট শোক নিরবতা পালন ও সামগ্রিক প্রতিবেদন পেশ করা হয়।
সম্মেলনে মহিলা সমিতি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি কাকলী খীসার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমা; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা, পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি আরাধ্যপাল খীসা, পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি প্রত্যয় চাকমা প্রমূখ। এছাড়াও মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয়, জেলা, থানা ও পিসিজেএসএস, পিসিপি, যুব সমিতির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নারীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুভাষ কান্তি চাকমা বলেন; ইন্দ্রা গান্ধী একসময় পুরো ভারতবর্ষ শাসন করে ছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী, আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট নারী- আপনারা দেখেন পুরো বিশ্বেই আজ নারীরা সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। সুতরাং জুম্ম নারীদেরও পেছনে পড়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রীতিলতা-জাসির রাণী-মাতঙ্গীনি হাজরারা যেভাবে অস্ত্র কাঁধে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন, কল্পনা চাকমা যেভাবে পাহাড়ের প্রতিটি শৃঙ্গে মুক্তির গান শুনিয়েছেন আপনাদেরও একইভাবে নারীদের মুক্তি-জুম্ম জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে সোচ্চার হতে হবে। প্রধান অথিতি আরও বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে, গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে আমরা নাকি চুক্তি বিরোধী প্রসীতপন্থী ইউপিডিএফের সাথে সমঝোতা করেছি- যা সম্পূর্ণ জুম্ম জনগণকে বিভ্রান্তি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। চুক্তি পক্ষের সাথে চুক্তি বিরোধীদের সমঝোতা হতেই পারেনা, তা শুধুমাত্র জুম্ম জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সন্তু লারমার দলের পক্ষেই সম্ভব।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে জুম্ম নারী সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন; পাহাড়ে কিংবা সমতলে নারীদের উপর প্রতিনিয়ত ইভটিজিং, ধর্ষণ, হত্যার মত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এই নির্যাতন-নীপিড়নের বিরুদ্ধে জুম্ম নারীদের মাঠে নামতে হবে, ঘর বন্ধী হয়ে পড়ে থাকলে নারীদের উপর দিনের পর দিন নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অগ্নিকণ্যা কল্পনা চাকমা যেভাবে নারীদের মুক্তির আন্দোলনসহ জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে আজীবন নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন, তেমনি বর্তমান জুম্ম নারীদেরও নারীদের অধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে হবে। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া যেভাবে মধ্যযুগের ঘোর অন্ধকার থেকে নারী সমাজকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিলেন, জুম্ম নারী সমাজকেও আলোর পথে নিয়ে আসতে প্রতিটি বেগম রোকেয়া- কল্পনাদের মত সাহসী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। শুধুমাত্র ঘরের ভিতরে রান্না-বান্না, সন্তানদের দেখাশোনা ইত্যাদি কাজে পড়ে থাকলে হবেনা, ছড়িয়ে পড়তে হবে সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে।
সবশেষে মহিলা সমিতি’র প্যানেল উপস্থাপন করেন মহিলা সমিতি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রত্না তঞ্চঙ্গ্যাঁ, প্যানেলের উপর কারো আপত্তি না থাকায় সবার সম্মতিক্রমে শ্রীমতি কাকলী খীসাকে পুনরায় সভাপতি, শ্রীমতি মল্লিকা চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীমতি ববিতা চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কেন্দ্রীয় মহিলা সমিতি গঠন করা হয়। নবাগত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমা।
পাহাড়ে ও সমতলে সকল ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে জুম্ম নারী সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি ও মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রীমতি কাকলী খীসা।