বিশেষ প্রতিনিধি ও বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি ভ্যানগার্ড
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলি ইউনিয়নের একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে এক কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে ইউপিডিএফের ৩ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। তারা হলেন ইউপিডিএফের সামরিক শাখার প্রধান সচিব চাকমা (সুকর্ণ), সহকারি প্রধান রঞ্জন মনি চাকমা (আদি) ও বাঘাইছড়ির পরিচালক অক্ষয় চাকমা। কিছুদিন আগে এ খবরটি প্রাকাশ্য চলে আসে।
জানা যায়, দূর্ঘম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটি জনপদের নাম জারুলছড়ি। উপজেলার বঙ্গলতলি ইউনিয়নের অন্তর্গত এ এলাকাটি সাজেক ইউনিয়নের সীমান্তে অবস্থিত। জারুলছড়ির গ্রামকে আবর্তিত করে বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও নিম্ন ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় অধিকাংশ ছাত্র/ছাত্রী ঝড়ে যায়। ফলে শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী আর্থিক দন্যতার কারণে দূরে ইচ্ছে থাকা সত্বেও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। সেদিক বিবেচনা বেশ কয়েকটি গ্রামের মুরুব্বী ও কার্বারীরা মিলে এলাকার প্রাণ কেন্দ্র জারুলছড়িতে ২০২২ সালে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেন এবং ফান্ড গঠন করেন। সকলের প্রচেষ্টায় গাছ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে ঠিন শেডের চার রুমের একটি স্কুল ঘর নির্মাণ করেন। সেটি আনুষ্টানিকভাবে ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী বাঘাইছড়ি উপজেলার তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম রুমানা আক্তার উদ্ধোধন করেন। উদ্বোধনের পর বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এতে নিয়োগকৃত শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯ জন। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ধরে রাখার জন্য নিয়োগকৃত শিক্ষকরা স্কুলের ফান্ডে প্রত্যকে ২ লক্ষ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা জমা দিয়েছেন। তাদের দেয়া টাকা ফান্ডে জমা হয় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। এছাড়া এলাকার বাঁশ ও গাছ ব্যবসায়ী, এলাকার সুশীল সমাজের মানুষজন ও মেম্বার, চেয়ারম্যানরা ফান্ডে এককালিন টাকা জমা দেন। আবার সরকারী বরাদ্ধ উপজেলা প্রশাসন থেকেও বেশ কয়েক দফায় আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হয়। এভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্টান থেকে ফান্ডে দানের টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটি টাকার উপরে। এ টাকা থেকে বড় একটি অংশ ব্যবসায়ী ও সক্ষম মানুষের কাছে ৫% লভ্যাংশ হারে দাদন দেন। দাদনের আসল বাদে লভ্যাংশ থেকে যে টাকাগুলো ফান্ডে আসবে সে টাকা থেকে শিক্ষকদের বেতন ও বিদ্যালয় উন্নয়ন কল্পে ব্যয় করা হবে বলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সিদ্দান্ত নেয়। এরপর দাদনের কার্যক্রমের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি কার্যক্রমও শুরু হয়।
এমন অবস্থায় শকুনের নজর পড়ে বিদ্যালয়ের ঐ ফান্ডে। বিদ্যালয়টি সুন্দর ভাবে কার্যক্রম চলার মূহুর্থে বিদ্যালয়ের ফান্ডে টাকা জমার পরিমাণ জানতে পেরে চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফের সামরিক শাখার প্রধান সচিব চাকমা (সুকর্ণ), সহকারি প্রধান রঞ্জন মনি চাকমা (আদি) ও বাঘাইছড়ি পরিচালক অক্ষয় চাকমা পরিচালনা কমিটির সভাপতি/সম্পাদককে ডেকে বিদ্যালয়টির সার্বিক দেখভাল করার অভিমত ব্যক্ত করেন। পরিচালনা কমিটির লোকজন ভয়ে ও সহজ সরল বিশ্বাসে ইউপিডিএফ নেতাদের কথায় মত দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য প্রতিবেদককে বলেন, ইউপিডিএফ বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমাদের বাক স্বাধীনতা হরণ হয়েছে। আমাদের চোঁখ, কান, মূখ সব বন্ধ হয়ে গেছে। দেখলেও বলতে পারিনা। শুনলেও বলতে পারিনা। শিক্ষকদের বেতন ভাতা নিয়মিত দিতে পারলেও আস্তে আস্তে ফান্ডটি নিচের দিকে ধাবিত হয়েছে। তাদের টাইম টেবল লাগেনা কখন যে কত পরিমাণ টাকা লাগে। যখন টাকা লাগে বিদ্যালয় ফান্ড থেকে তারা ধার হিসেবে নেই, তারপর আর শোধ করেনা। এভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির লোকজন ও শিক্ষকরা জানতে পারলেও কিছু বলার সাহজ রাখেনা কেউ।
সর্বশেষ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরেন্টু চাকমা কিছুদিন আগে ঘা ঢাকা দেয়াতেই ফান্ডটি শূণ্য হওয়ার বিষয়টি এখন প্রকাশ্য হয়ে উটেছে। তথ্যমতে, তিনি বিদ্যায়লয়ে কর্মরত শিক্ষকদের আর বেতন ভাতা দিতে পারছেননা। কারণ বিদ্যালয়ের ফান্ডে আর টাকা তেমন নেই। যেগেুলো আছে সেগুলো দিয়ে বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ আর বিদ্যালয় পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সে কারণে তিনি ঘা ঢাকা দিেেয়ছেন। আবার অন্য একটি সূত্র বলেছে, ইউপিডিএফের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হওয়ায় সু-কৌশলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরেন্টু চাকমাকে অন্যত্র পালিয়ে যেতে চাপ দিয়েছে ইউপিডিএফ। কারণ তিনি থাকলে বিদ্যালয়ের ফান্ড শূণ্য হয়ে যাওযার বিষয়টি একবারে দিনের আলোর মত ফুটে উঠবে।