বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি ভ্যানগার্ড
ভারতের মিজোরাম রাজ্যের রাজধানী আইজল শহরে বাংলাদেশের সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট সংক্ষেপে ইউপিডিএফ এর এক শীর্ষ নেতাসহ তিনজনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করার খবর পাওয়া গেছে। গত পরশু (মঙ্গলবার) মিজোরাম পুলিশ সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ইউপিডিএফের বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক সুগত চাকমা (৫২) ওরফে তেজস/যাগোন, অস্ত্র বহনকারী পলটেশ চাকমা (৩৫) ও অস্ত্র কারবারী উত্তম চাকমা (৩৬)।
জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মরিচাবনছড়া গ্রামের হেমেশ কুমার চাকমার ছেলে ইউপিডিএফের বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক সুগত চাকমা। দলীয় নাম তেজস/যাগোন। একই জেলার সাজেক ইউনিয়নের দারিপাড়া গ্রামের সুর্যকান্ত চাকমার ছেলে ইউপিডিএফের প্রধান অস্ত্রবহনকারী পলটেশ চাকমা। আরেকজন ভারতের মিজোরাম রাজ্যের মামিত জেলার শিলছড়ি গ্রামের মেরেয়ে চাকমার ছেলে ইউপিডিএফের প্রধান অস্ত্র কারবারী উত্তম চাকমা। তাদের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি এসএমজি ও এ্যামুনিশন পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে এখনো আইজল পুলিশের কাছে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরো নতুন নতুন তথ্য তথ্য দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সুত্র জানায়, গত ১০/১৫ দিন আগে বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের বেটলিং, আমছড়ির দিকে ইউপিডিএফের ৩০/৪০ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ যায়। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন কমান্ডার পরান্টু চাকমা, কমান্ডার রাজীবগান্ধী চাকমা। সেদিকে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো মিজোরাম থেকে গাড়ি যোগে গ্রেফতারকৃরা অস্ত্র ও এ্যামুনিশন নিয়ে আসবে আর সেগুলো তারা রাতের অন্ধকারে বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। এসব অস্ত্র কারবারের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে সাজেকের ভূয়াছড়ি ব্যারাকে বসে বসে মনিটরিং করছেন ইউপিডিএফের সামরিক বিভাগের উপ-ফিল্ড কমান্ডার রঞ্জন মনি চাকমা ওরফে আদি। এই রঞ্জন মনি চাকমা ওরফে আদি বর্তমানে রাঙামাটি জেলে আটক ইউপিডিএফের সামরিক বিভাগের ফিল্ড কমান্ডার আনন্দ প্রকাশ চাকমা ওরফে পারং বাবুর স্থলাভিষিক্ত হয়ে আপাতত ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিজোরাম পুলিশের হাতে আটক ইউপিডিএফের বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক সুগত চাকমা বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে চোরাইপথে ভারতের ত্রিপুরাতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের নাম ঠিকানা গোপন করে অন্য নাম ও ঠিকানা ব্যাবহার করে সেখানকার নাগরিকত্ব নেয়ার জন্য যে আধার কার্ড, পেনকার্ড, আইডি কার্ড, রেশন কার্ড লাগে সে সব কিছুই করেছেন। অনুরুপভাবে ইউপিডিএফের প্রধান অস্ত্রবহনকারী পলটেশ চাকমাও একই কায়দায় বাংলাদেশের নাম ঠিকানা গোপন করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। তাদের দুইজনের এ চতুর কাজটি করার উদ্দেশ্য হল ইউপিডিএফের হয়ে ভারতে বসে বার্মা ও চীন থেকে চোরাইপথে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা। তাদের মত করে ইউপিডিএফের অনেক নেতা কর্মী ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম ও অরুনাচলে চুপিচারে অবস্থান করছে। যে যেভাবে পারে তারাও সেখানে বসে বসে ইউপিডিএফের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করছে এবং এগুলো বাংলাদেশ ও ভারতের অরক্ষিত বর্ডার দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকাচ্ছে। ইউপিডিএফের প্রধান অস্ত্র সংগ্রহকারী ডা: প্রীতি চাকমা বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলে বন্দী থাকার পর ভারতীয় বর্ডার ক্রস করে অস্ত্র আনা নেওয়ার কাজটা এখন তাদের বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক সুগত চাকমা দেখভাল করছেন।
জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেলে তাদের সামরিক শাখার প্রধান আনন্দ প্রকাশ চাকমা ও অস্ত্র সংগ্রাহক ডা: প্রীতি চাকমা আবারো ব্যাপকভাবে অস্ত্রের চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।