এর শেষ কোথায়!!

মতামত

জাডিল মৃ

ছবিঃ জাডিল মৃ

বন নিয়ে রাজা দেবাশীষ রায়ের একটি কথা বারবার মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘যখন বন ছিল, তখন বন বিভাগ ছিল না। বন বিভাগ সৃষ্টি হওয়ার পরই বন ধ্বংস শুরু হয়েছে।

আমি ভালো খবর নিয়ে আসিনি। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে লিখতে বসেছি। ইতিমধ্যেই আপনারা অবগত আছেন সোমবার (১৪ই সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টার মধ্যে পেগামারী গ্রামের গারো আদিবাসী বাসন্তী রেমা’র  ৪০ শতাংশ জমির ৪৫০-৫০০ কলাগাছ কর্তন করা হয়েছে বিনা নোটিশে। যার বাজার মূল্য ৩ লক্ষ টাকা। জানা যায়, বাসন্তী রেমা ধার দেনা করে তিলেতিলে গড়ে তুলেছিলেন কলা বাগানটি। এত কষ্ট করে সুন্দর বাগান তৈরি করা হলো বটে কিন্তু সেখান থেকে ফসল পেলো না। কষ্টের ফল পেলো বাগান কর্তন। এই যে ধার দেনা এই ঋন কীভাবে শোধাবেন বাসন্তী রেমা? খবরে জানা যায়, বনবিভাগ বিনা নোটিশে কিছু না বলেই কলাগাছ কেটে চারা গাছ রোপণের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কলাগাছ কাটতে পারলেও এলাকাবাসীর বাঁধায় চারাগাছ  রোপণ করতে পারেনি।

যে জমিকে দখল মুক্ত করার কথা বলেছে সেই জমি বংশনুক্রমে চাষবাস করে আসছে বাসন্তী রেমার পরিবার। এবং যুগের পর যুগ জমি ভোগ করে আসছে। হঠাৎ করে জমি দখল মুক্ত করা,  এটার পেছনের কারণটা কী? শুধু বাসন্তী রেমা একা যে ভুক্তভোগী এমনটা নয়। এর আগেও অনেকের সাথে এমন হয়েছে। কিন্তু ঘটনা মিডিয়াতে আসেনি বা ফোকাস হয়নি। সুতরাং বাসন্তী রেমা’র ঘটনা যেহেতু মিডিয়াতে চলে এসেছে, সে-ই সূত্রে সবাই জানতে পেরেছে। কলাগাছ কর্টনের ঘটনা যে প্রথমবার এমনটা বলা যাবে না। সুকৌশলে ধাপে ধাপে ও ধারাবাহিকভাবে এই ঘটনাগুলো ঘটে চলছে।

যখন ফখরুদ্দিন এর আমল ছিল ২০০৭ সালে। তখন সবার কলাগাছ কেটে চারাগাছ লাগাতে দেখেছি। একিভাবে আজকেও এমন ঘটনা দেখলাম। আবার নতুন করে কী শুরু হলো?  হয়তো নিগূঢ় রহস্য লুকিয়ে আছে। বন থেকে বনের সন্তানদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা করে আসছে সেটাই ইঙ্গিত বহন করে কীনা, ভাবনার বিষয়।

আমরা একটু ইতিহাসের দিকে চোখ বুলাই। টনি চিরান তার ফেসবুকে লিখেছেন, কোন শাসকগোষ্ঠীর আমলেই মধুপুর আবিমার আদিবাসীরা ভালো ছিলো না, এখনো ভালো নেই। বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠীর আমলে মধুপুর গড়াঞ্চলের আদিবাসীদের অবস্থা:

পাকিস্তান আমল :

১। ১৯৪৯-৫০ খ্রিষ্টাব্দে ‘পূর্ব পাকিস্তান প্রাইভেট ফরেস্ট অ্যাক্ট’ ও ‘Acquisition and Tenancy Act (1950) এর মাধ্যমে রিজার্ভ ফরেস্ট নাম দেওয়া হয়।

২। ১৯৬২ সালে আদিবাসীদের উচ্ছেদের জন্য ‘জাতীয় উদ্যান’ নাম দিয়ে ২০,৮২৭.৩৭ একর মান্দি এলাকার বনকে তারের বেড়া দেওয়া হয়।

#জিয়ার আমল

৩। ১৯৭৭-৭৮ সালে বিমানবাহিনীর জন্য ফায়ারিং রেঞ্জ এর নামে গারো গ্রাম উচ্ছেদ।

#এরশাদের আমল

৪। ১৯৮৪ সালে গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বনবিভাগ কর্তৃক উচ্ছেদ নোটিশ।

#বিএনপি ও আওয়ামী লীগ আমল

৫। ১৯৮৯-৯৫ সাল পর্যন্ত বনবিভাগ কর্তৃক প্রাকৃতিক শালবন ধ্বংস করে সামাজিক বনায়ন ৭ একর ভূমিতে ও ৮ হাজার হেক্টর জমিতে রাবার বাগান।

৬। আদিবাসীদের উচ্ছেদ ষড়যন্ত্রের জন্য ইকোপার্ক প্রজেক্ট (এই আন্দোলনে বনবিভাগের গুলিতে পীরেন স্নাল নিহত, উৎপল নকরেক চিরপঙ্গুত্ব বরণ করেন, অর্ধশতাধিক লোক আহত)

আদিবাসীদের নামে শত শত মিথ্যা বন মামলা

#তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলঃ

৭। সেনা হেফাজতে বিচারবহির্ভূভাবে হত্যার শিকার আদিবাসী নেতা চলেশ রিছিল

৮। কোটি কোটি টাকার আবাদি ফসল বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক কেটে উজাড় করা হয়।

#আওয়ামী লীগ এর আমল

৯। ২০১৬ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ৯১৪৫.০৭ একর আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাকে বন আইনের চূড়ান্ত ধারায় রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করে আদিবাসীদের উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র।

১০। ২০১৮ সালে ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন এর নামে উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র।

তাহলে আমাদের সহজেই অনুমেয় মধুপুর অঞ্চলে গারো আদিবাসীরা কী অবস্থায় আছে। কত শোষণ বঞ্চনার মধ্যে দিয়ে তাঁরা জীবনযাপন করছে। সহ্যের সীমা আছে, সীমা থাকা দরকার। আর কতদিন এমন চলবে!!! এর শেষ কোথায়!!

জাডিল মৃ তরুণ লেখক. ব্লগার

***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

Tags: , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

আয়ের উৎস নেই, তবু অর্থ-সম্পদের পাহাড় !
নোবেল শান্তির জন্য মনোনীত বাংলাদেশি চিকিৎসক রুহুল আবিদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu