রাঙামাটি প্রতিনিধি
রাঙামাটিতে অন্যান্য কৃষি ফসলের পাশাপাশি সুস্বাদু পুষ্টিকর রসালো ফল মাল্টা চাষে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এজন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাল্টার আবাদ ভালো হয়েছে এবং দাম ভালো পাওয়ায় সুস্বাদু পুষ্টিকর রসালো ফল মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ২১০ হেক্টর জমিতে বারি-১ মাল্টা আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে মাল্টা গাছে ফলন হয়েছে ১০৮ হেক্টর জমিতে তার মধ্যে সদরে ১০ হেক্টর, নানিয়ারচরে ২০ হেক্টর, কাউখালীতে ১০ হেক্টর, বরকলে ১২ হেক্টর, জুরাছড়িতে ৫ হেক্টর, লংগদুতে ১৮ হেক্টর, বাঘাইছড়িতে ১১ হেক্টর, কাপ্তাইয়ে ১৪ হেক্টর, রাজস্থলীতে ৪ হেক্টর, বিলাইছড়ি উপজেলায় ৪ হেক্টর।
কৃষি বিভাগ আরো জানায়, এলাকার বেকার যুবকরাও অন্যান্য ফসল চাষের পাশাপাশি মাল্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কৃষকদের নতুন ফল ও ফসলের প্রতি আগ্রহ থাকে। জেলার কয়েকটি এলাকায় ভারমিক পদ্ধতিতে বারি-১ মাল্টা চাষের উপযোগী জমিতে চাষ করা হচ্ছে। যেখানে কৃষকরা ধানের পাশাপাশি মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপণ করতে পারলে এবং নিবিড় পরিচর্যায় মাল্টার ফলন ভালো হয়।
গেল ১৩ বছর ধরে রাঙামাটিতে মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হচ্ছে এবং চাষিদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। গেল বছর সুস্বাদু রসালো এ মাল্টা স্থানীয় বাজারে স্বল্প আকারে বিক্রি করা হয়েছিল। কোনো ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ ছাড়াই জমি থেকে মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। ক্রেতারা স্থানীয় এসব ফল কিনতেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। স্বাদও মোটামুটি ভালো বলে জানা গেছে। এদিকে, মালটা চাষে সফলতার মুখ দেখছেন রাঙামাটির শহরের ঝগড়াবিলের বিলাইছড়ি এলাকার মনিন্দ্র চাকমা। এ বছর মালটা বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করার আশা রয়েছে তার। তিনি জানান, ৩ একর জমিতে মাল্টা চাষ করা হয়েছে। মাল্টা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ার কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে সব জমিতেই চাষ করবেন। তাই তিনি তার জায়গাতে একটি মিশ্র ফলের বাগান করার চেষ্টা করেন আর জেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বাগানে মিশ্র ফলের চাষ শুরু করি। তিনি আরো জানান, বারি – ১ জাতের মাল্টা একটি নতুন একটি ফসল। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ফসল থেকে ঝামেলা ও পরিশ্রম কম। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভেঙে যাওয়ার কোনো সম্ভবনা থাকে না। এবছর আরও জেলা কৃষি অফিসের প্রকল্পের মাধ্যমে বারি-১ জাতের মাল্টার চারা ৪৫০ টি রোপণ করেছেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আপ্রু মারমা বলেন, ‘মাল্টা একটি পুষ্টিকর ফল। মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাজারে এর চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। আগামীতে এর আবাদ আরও বাড়ানো হবে।’
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাল্টা চাষে উদ্বৃদ্ধ করা হচ্ছে। গত ২০০৭ সাল থেকে মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে। এ জেলায় প্রায় মোট ২১০ হেক্টর জমিতে মাল্টা আবাদ করা হয়েছে। এছাড়া ৮ উপজেলায় প্রায় ৩০টি প্রদর্শনী লেবু জাতীয় উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমাদের এলাকার জমি মাল্টা চাষের জন্য উপযোগী এবং আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। বারি-১ লাভজনক ও সুস্বাদু ফল হওয়ায় চাহিদা বেশি।