খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
“পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন জোরদারসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে সকল প্রকার অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী শিক্ষার্থীদের লড়াকু ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) প্রতিষ্ঠার তিন যুগ পূর্তিতে র্যালী, গণসংগীত এবং বিশাল ছাত্র-জনতার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিশান চাকমার সঞ্চালনায় এবং কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা (ঝিমিট)’র সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা। পিসিপির সহ সাধারণ সম্পাদক পিন্টু চাকমার স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেএসএস কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক সাথোয়াই অং মারমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম মহানগর সংসদের সাধারণ সম্পাদক শুভ দেবনাথ, জেএসএস খাগড়াছড়ি জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যয় চাকমা, যুব সমিতির সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের আহ্বায়ক মায়া চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে সকাল ১০ ঘটিকায় খাগড়াছড়ি সদরস্থ সূর্য শিখা ক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষুব্ধ র্যালীসহকারে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত শত শত পিসিপির কর্মী, সমর্থক এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা অংশগ্রহণ করেন।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও দলীয় সংগীতের মাধ্যমে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এবং বেলুন উড়িয়ে সমাবেশের উদ্বোধনের পরবর্তীতে সমাবেশে আগত কর্মী-সমর্থকদের সামনে গণসংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীবৃন্দরা।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা শুনতে পায় রাষ্ট্রীয় মদদে সৃষ্ট উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নির্লজ্জভাবে বলে, পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মরা ভিন্ন দেশ থেকে এসেছে। অথচ ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময়েও পার্বত্য চট্টগ্রামের মুসলিম জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১.৫%।

তিনি আরও বলেন, নিজেদের অধিকারের কথা বলতে গেলে আমাদেরকে তকমা দেওয়া হয় বিচ্ছিন্নতাবাদের। আমরা বাংলাদেশের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করেই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং আজকের এই সমাবেশের সূচনাও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে হয়েছে।
তিনি উপস্থিত ছাত্রজনতার প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন তথা জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় একবিন্দু যেন ছাড় দেওয়া না হয়।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, চুক্তি পরবর্তী সময়ে চুক্তি মোতাবেক যখন অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করা হচ্ছিল তখনই রাষ্ট্রীয় মদদে সৃষ্ট চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ কর্তৃক তিন বিদেশীকে অপহরণ করিয়ে এই প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত করে অপারেশন উত্তরণের নামে সেনাশাসনকে বৈধতা দেওয়ার অপপ্রয়াস চালিয়েছে, এখনও এই সংগঠনটি সময়ে সময়ে অপহরণ বাণিজ্যের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করে রাখার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে চলেছে। একইসাথে রাষ্ট্রীয় মদদে গজে উঠছে ভুঁইফোঁড় কতগুলো সংগঠন, যাঁদেরকে দিয়ে কোন কিছু বিপক্ষে গেলেই ১০-২০ জনের মিছিল করিয়ে, পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল দেখিয়ে ফায়দা লুটছে একটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী।
সমাবেশ থেকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, জুম্মজনগণ রাজপথে যেমন আন্দোলন করতে জানে তেমনি ভিন্নপথের আন্দোলনের মাধ্যমেও কিভাবে অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয় তার অতীত অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রয়োজনে আবারও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় আরও একবার রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা।
সমাবেশ থেকে চুক্তি বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার মাধ্যমে আন্তনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন জোরদারের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়।