রাঙ্গামাটিতে ধর্ষণের বিচার ও ৮ দফা দাবীতে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভ

পার্বত্য চট্টগ্রামরাঙ্গামাটিসংবাদ

বার্তাকক্ষ

রাঙ্গামাটিতে আদিবাসী নারী ধর্ষণের ঘটনা বিচার ও আট দফা দাবী পূরণে বিক্ষোভ করেছে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ী ছাত্র আন্দোলন। আজ মঙ্গলবার সকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খবর এবং ছবি আজকের পত্রিকা সূত্রে।

শিক্ষার্থী বিকাশ চাকমার সঞ্চালনায় এবং নিলা চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কিকো দেওয়ান, সংগীতশিল্পী বিজ্ঞান্তর তালুকদার, উক্রাচিং, মারমা, রিপুল চাকমা, সৃটন চাকমা প্রমুখ।

আজ সকালে রাঙ্গামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার পাহাড়ে আদিবাসী নারী ধর্ষণ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বলেন, যেখানে সারা দেশের মানুষ ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি জেলার বন্যাদুর্গতদের জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করছে, সেখানে পার্বত্য তিন জেলায় একযোগে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

বক্তারা আরও বলেন, সারা দেশ যে নীতিতে পরিচালিত হয়, তার ব্যতিক্রম পার্বত্য চট্টগ্রাম। এখানে এখনো যুগ যুগ ধরে সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে। এর মাঝেও এখানে প্রতিনিয়ত খুন, ধর্ষণসহ নানা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংগঠিত হয়। সম্প্রতি দেশে সরকার পরিবর্তন হলেও পাহাড়ে বৈষম্য কমেনি।

১ শতাংশ আদিবাসী কোটা প্রত্যাখ্যান করে বক্তারা বলেন, প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে আদিবাসীদের ১ শতাংশ কোটা দিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। 
পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না করে উল্টো ১৯০০ সালের শাসনবিধি বাতিলের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র বন্ধ না করলে ছাত্রসমাজ ঘরে বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত খারাপ কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে খারাপ এলাকা হিসেবে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। যুগ যুগ ধরে এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পাঠ্য পুস্তকে আদিবাসীদের সংস্কৃতি সঠিকভাবে উপস্থাপন, সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল, পাহাড়ে ভূমি সমস্যা নিরসন, সবার গ্রহণযোগ্য নিষ্ঠাবান শিক্ষিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে শক্তিশালী তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন, আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রামকে পানিশমেন্ট জোন হিসেবে ব্যবহার না করা, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া।

উল্লেখ্য, গত ২২ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের তালতলী পাড়া এলাকায় ৭/৮ জন সেটেলার বাঙালি কর্তৃক এক চাকমা নারীকে (৪০) ধর্ষণ করার অভিযোগ পাওয়া যায়। সেখানে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী নারী ও তার মেয়ে ৮ জন সেটেলার বাঙালির মধ্যে ৩ জনকে চিনতে পেরেছেন বলে জানা গেছে। তারা হল- (১) মোঃ ইউসুফ (২২), পিতা-মোঃ ইসমাইল, (২) রানা ও (৩) মোশাররফ। তাদের সকলের বাড়ি পাতছড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের নাকাবা রসুলপুর এলাকার কুমিল্লা কলোনিতে বলে জানা গেছে।

এছাড়া, গত ২৩ আগস্ট, আনুমানিক বিকাল ৪ টায় রাঙ্গামাটির শহরের ব্যস্ততম বাজার বনরূপা বাজারে মোঃ হাবিবুর রহমান (৫৫) নামে এক সেটেলার বাঙালি কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক জুম্ম ছাত্রী (৭) ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ধর্ষণের চেষ্টাকারী প্রথমে তার নাম রাইছ মিয়া বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়। পরে থানায় সঠিক নাম বেরিয়ে আসে। ঐদিনই এলাকাবাসী মোঃ হাবিবুর রহমানকে ধরে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে।

অপরদিকে, গত (২৩ আগস্ট), শুক্রবার, বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নে ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিবাহিত এক তঞ্চঙ্গ্যা নারী (৪০) ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের চেষ্টাকারী বহিরাগত সেটেলার বাঙালিটির নাম মোঃ ফারুক (২৫), পীং-বশর উদ্দিন, গ্রাম-শিকদার বিল, রাজাপালং ইউনিয়ন, উখিয়া উপজেলা, কক্সবাজার জেলা।

Tags: , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

রামগড়ে আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় তিন ধর্ষক গ্রেফতার
জেএসএস কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সদস্য প্রশান্ত চাকমার প্রয়াণঃ জেএসএস এর শোক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu