সিএইচটি ভ্যানগার্ড
“১৯০০ সালের শাসনবিধি বাতিলের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে অন্তিবিলম্বে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে জোরদার গণ আন্দোলন গড়ে তুলুন” এই স্লোগানে জেএসএস পানছড়ি থানা ও মাটিরাঙ্গা থানা কমিটির যৌথ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। অদ্য ২৮ জুন ২০২৪ইং খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুরস্থ জেবিসি রেস্টুরেন্ট প্রাঙ্গণে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
মাটিরাঙ্গা থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী অমর সিং চাকমার সঞ্চালনায় ও পানছড়ি থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী বিমলেন্দু চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীর সাধারণ সম্পাদক শ্রী অংশুমান চাকমা।
এছাড়াও সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় সদস্য শ্রীমতি রত্না তঞ্চঙ্গ্যা, কেন্দ্রীয় সদস্য শ্রীমতি দুর্গারাণী চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী শোভা কুমার চাকমা, সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রীতি খীসা প্রমূখ। এছাড়াও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, যুব সমিতি ও মহিলা সমিতির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনের শুরুতে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। মঞ্চে আসন গ্রহণের পর শোক প্রস্তাব পাঠ করেন তপন বিকাশ ত্রিপুরা। এরপর জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী এমএন লারমা সহ সকল বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়। পানছড়ি থানা জনসংহতি সমিতির সামগ্রীক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী থানা কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী রণজীবন চাকমা এবং মাটিরাঙ্গা থানা কমিটির সামগ্রীক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী অমরসিং চাকমা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তিকে পাশ কাটিয়ে উন্নয়নের নামে জুম্ম স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন সরকারী পদক্ষেপগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এবং জুম্ম জনগণের জন্য কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি। সকলকে মনে রাখতে হবে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এমনিতেই স্বাক্ষরিত হয়নি। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে একটি জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে স্বীকার করেই তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে । ফলে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংগ্রামের পথ পরিহার করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করার পথ সৃষ্টি হয়। কাজেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে শান্তি ও উন্নয়নের লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের বিকল্প থাকতে পারেনা।
১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বাতিলের ষড়যন্ত্র, উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল, চীনে জুম্ম নারী পাচার সহ জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মুলের যে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে তার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, জেএসএস বরাবরই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিপক্ষে। সংগঠনের বহু ত্যাগী নেতা-কর্মী ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, আর নয় সংঘাত, পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করতে হবে। পার্বত্য চুক্তি তথা জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তবে সেই ঐক্য হতে হবে আদর্শিক। আদর্শিক ঐক্য না হওয়ার কারণে পূর্বেও দীর্ঘস্থায়ী ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মন্তব্য করা হয়।
সবশেষে শ্রী বিমলেন্দু চাকমাকে সভাপতি, শ্রী জগদানন্দ ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী অমল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট জনসংহতি সমিতি পানছড়ি থানা কমিটির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়াও শ্রী অমরসিং চাকমাকে সভাপতি, শ্রী দীপু চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও মোহন ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট জনসংহতি সমিতি মাটিরাঙ্গা থানা কমিটির নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
একইসাথে পানছড়ি থানা যুব সমিতি ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। শ্রী জুমান চাকমাকে সভাপতি, শ্রী সংগ্রাম চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও জ্যোতিকর চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি পানছড়ি থানা কমিটি এবং শ্রী রিমেশ চাকমাকে সভাপতি, শ্রী উষাচিং মারমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী দীপু চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিগুলোর প্যানেল উপস্থাপন করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি ও জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা। জনসংহতি সমিতির দুই থানা কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা। যুব সমিতির নতুন কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান যুব সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সোনামনি চাকমা এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নবাগত কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুভাষ চাকমা।