সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২৩, সকাল ১০ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরস্থ খাগড়াপুর এলাকায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী বিভূ রঞ্জন চাকমা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রণব চাকমা। পতাকা উত্তোলনের পর জনসংহতি সমিতির নেতৃবৃন্দরা বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন।
আলোচনা সভার শুরুতে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী এমএনলারমাসহ সকল বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়। “পার্টির আদর্শগত ঐক্য-সংহতি ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন জোরদার করুন” এই স্লোগানে আলোচনা সভায় জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী বিভূ রঞ্জন চাকমা। আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা। সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিন্ধু কুমার চাকমা, সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা, সহ-সভাপতি শ্রী শোভা কুমার চাকমা; জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুরেশ কান্তি চাকমা। এছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্রী সুনেন্টু চাকমা; যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী জ্ঞান প্রিয় চাকমা; মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদিকা শ্রমতি মল্লিকা চাকমা প্রমূখ।
বক্তারা জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে জুম্ম জনগণকে সাথে নিয়ে কত কঠিন-দুর্বার সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারকে চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে তার বর্ণনা তুলে ধরেন। জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ে এই সংগঠনের কত সদস্য আত্মবলিদান দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন, কত মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছেন সকলের প্রতি পার্টির পক্ষ থেকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়াও জনসংহতি সমিতির অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জুম্ম জনগণ, রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন, সাংবাদিক, দেশের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্বসহ এযাবতকালে যারা সাহায্য সহযোগীতা দিয়েছেন তাদের সকলকে পার্টির পক্ষ থেকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানানো হয়। এবং আগামীদিনের লড়াই-সংগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আন্দোলনে পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে চুক্তিবিরোধী শক্তি যে ধ্বংসলীলা শুরু করেছে তা জুম্ম জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে পরিহার করার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও সন্তু লারমাকে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও নির্মূলীকরণের নীতি পরিহার করে বৃহত্তর জুম্ম জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর হতে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর বিভিন্ন ভাঙাগড়া ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন থমকে গিয়েছে- সে কারণে জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের আহ্বান জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য যে, ১৯৭২ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র প্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে গঠিত হওয়া এই সংগঠন দীর্ঘ পথ পরিক্রমা পেরিয়ে আজ ৫০টি বছর পার করেছে। জুম্ম জনগণের অবিসংবাদিত নেতা ও সাবেক সাংসদ শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিল এ সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠনটির প্রথম সভাপতি ছিলেন শ্রী বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। সুদীর্ঘ দুই দশকের অধিক সময় সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও আজো তা অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে, ফলশ্রুতিতে জুম্ম জনগণ আজ হতাশায় পর্যবসিত।