ভ্যানগার্ড ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। আগামীকাল ২০শে মে ২০২২ইং সংগঠনটির ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদুতে সেটেলার বাঙ্গালীরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় জুম্মদের উপর নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। ঘটনার দিন বিকাল আনুমানিক ৪টার সময়ে লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকারকে তার অফিসের সামনে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে। সেটেলার বাঙ্গালীরা এর দায় চাপিয়ে দেয় শান্তিবাহিনীর উপর এবং দুই-আড়াই ঘন্টা পর জুম্মদের গ্রামে প্রতিশোধমূলক হামলা করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর তৎকালীন রিপোর্ট অনুযায়ী এই হামলায় ৩৬ জন জুম্ম নারী-পুরুষ ও শিশু মারা যায়। প্রকৃতপক্ষে নিহতের সংখ্যা ২০০ এর অধিক বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। এ হামলায় কমপক্ষে ৬টি গ্রামে শত শত ঘরবাড়ি, অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির ও খ্রীস্টানদের দুটি গীর্জা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সহায় সম্বলহীন জুম্মদের একটি বিরাট অংশ পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পাড়ি জমায়।
এ হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৮৯ সালের ২০শে মে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) রশিদ হলের ২০০২ নং রুমে মিলিত হয়ে গঠন করে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। এবং ২১শে মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবীতে একটি মৌন মিছিলের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে জুম্ম ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠনের। প্রতিষ্ঠার পর হতে বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সংগঠনটি আগামীকাল ২০শে মে ২০২২ ইং ৩৩টি বছরে পদার্পণ করতে চলেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র বিলি ও পোস্টার টাঙানো হয়েছে। ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের এবারের আহ্বান “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নসহ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ছাত্র সমাজের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলুন”। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ও প্রচারপত্র বিলি করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। প্রচারপত্রে প্রতিষ্ঠার পর হতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের যত কর্মী -সমর্থক শত্রু বাহিনীর হাতে জীবন দিয়েছেন; কারাভোগ করেছেন; পঙ্গুত্ববরণ করেছেন এবং যারা এখনো সংগঠনে যুক্ত থেকে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে নিজেদের অব্যাহত রেখেছেন তাদের সকলকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন। জুম্ম ছাত্র সমাজ, অধিকার হারা জুম্ম জনগণ, দেশবাসী ও সমগ্র বিশ্বের অধিকার হারা মানুষের পক্ষে সংগ্রামরত সকল মানুষদের সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানিয়েছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।
প্রচারপত্রে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের জনক চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ ও সেচ্ছাচারী-কর্তৃত্বসুলভ নেতা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির অদূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের এ বেহাল অবস্থা বলে দাবী করা হয়। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহলের প্রত্যক্ষ মদদে গজিয়ে উঠা মগ পার্টি ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট নামে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা, শ্রীলংকার অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশের অরাজক পরিস্থিতি, পাকিস্তানের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সর্বোপরি দক্ষিণ এশিয়ার এই অরাজক পরিস্থিতিতে জুম্ম জনগণ খুবই করুণ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা তুলে ধরেছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।
আদিবাসী কোটা ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার দরুণ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীগুলোকে আরো পিছনে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর কথা থাকলেও গুটিকয়েক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হলেও শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে তাও পাঠদান সম্ভব হচ্ছেনা। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সময় ধরে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুম্ম জনগণের মাঝে হতাশা নিরাশা বিরাজ করছে। পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনবিহীন দলীয় নেতা কর্মীদের দিয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে। ঘুষ, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাকরিতে মোটা অংকের টাকা আদায় ইত্যাদি যেন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে পার্বত্য জেলা পরিষদ্গুলোতে।
তাই জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষা তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ইস্পাত কঠিন ঐক্যের আহবান জানিয়ে আগামীকাল ২০শে মে ২০২২ ইং ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে খাগড়াছড়ি সদরে এক বিশাল ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করেছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। উক্ত ছাত্র সমাবেশে সকলকে দলে দলে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ।