ভ্যানগার্ড ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, সাবেক সাংসদ, জুম্ম জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত, জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, মেহনতী মানুষের পরম বন্ধু, প্রগতিশীল চিন্তাধারার ধারকবাহক মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস আজ। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর বিভেদপন্থী গিরি, দেবেন, পলাশ, প্রকাশ চক্রদের চক্রান্তে নির্মমভাবে ৮ সহযোদ্ধাসহ পানছড়ি উপজেলার খেদারাছড়া থুমে শহীদ হন মহান নেতা এমএন লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে প্রতিবছর তাদের আত্মত্যাগ ও এযাবতকালের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের স্মরণে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে সকাল ৭ ঘটিকার সময়ে জনসংহতি সমিতি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহাজন পাড়াস্থ সূর্যশিখা ক্লাব প্রাঙ্গনে জমায়েত হয়। এরপর কালো ব্যাজ ধারণ ও প্রভাতফেরীর মাধ্যমে এমএন লারমা ভাস্কর্যে পুষ্পমাল্য অর্পন করেন নেতাকর্মীরা। পুষ্পমাল্য অর্পন করেন- পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটি, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) কেন্দ্রীয় কমিটি, পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি, খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটি, পৌর কমিটি; মহিলা সমিতি; যুব সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি, সদর থানা কমিটি; পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি, সদর থানা কমিটি, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ কমিটি। এছাড়াও সুশীল সমাজ, পার্বত্য যানবাহন মালিক সমিতি, জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতি, কার্বারী এসোসিয়েশন, শহীদ শ্রী সুধাসিন্ধু খীসার পরিবার ও শহীদ শ্রী তাতিন্দ্র লাল চাকমা’র (পেলে) পরিবারসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ শোক ও শ্রদ্ধায় পুষ্পমাল্য অর্পন করেন। পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে জনসংহতি সমিতি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুরস্থ খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে স্মরণ সভার আয়োজন করে। স্মরণ সভায় জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুমেধ চাকমার সঞ্চালনায় এমএনলারমার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আরাধ্য পাল খীসার সভাপতিত্বে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বিভূরঞ্জন চাকমা, বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রণব চাকমা, পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় নেতা কমল বিকাশ চাকমা, জুম্ম শরনার্থী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সন্তোষিত চাকমা (বকুল) প্রমূখ।
স্মরণ সভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুশীল চাকমা। শোক প্রস্তাব পাঠ শেষে এমএনলারমাসহ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী সকল বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে বিভূরঞ্জন চাকমা বলেন পৃথিবীর অধিকার হারা মানুষদের প্রতিটি লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উদ্ভব আমরা লক্ষ্য করেছি, তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্রও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। জুম্ম জাতীয় কুলাঙ্গার। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যতই শক্তিশালী হোক সত্য ও ন্যায়ের সাথে লড়াইয়ে তারা কোনদিন ঠিকে থাকতে পারেনা, গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্রও ঠিকে থাকতে পারেনি। মহান নেতা এমএনলারমা আজ প্রয়াত কিন্তু তার প্রদর্শিত পথ-আদর্শ আজও আমাদের মাঝে বিদ্যমান। সেই আদর্শকে বুকে ধারণ করে, শোককে শক্তিতে পরিণত করে এসময়ের গিরি-প্রকাশ-দেবেন-পলাশ চক্র সন্তু লারমার দল ও ইউপিডিএফকে(প্রসীত) কঠোর হস্তে দমন করে জুম্ম জনগণকে সাথে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রণব চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন ও জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় এমএনলারমা মত, পথ, নীতি-আদর্শ লালন করার আহ্বান জানান। এমএনলারমার আদর্শে উজ্জিবিত হয়ে সমগ্র জুম্ম জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান প্রেক্ষাপট থেকে উত্তরণ ও জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়াস্থ এমএন লারমার ভাস্কর্য পাদদেশে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলন করা হয়। এতে জনসহতি সমিতি’র নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে পানছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়ি নানিয়ারচর, বাঘাইছড়ি, লংগদু, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যথাযোগ্য মর্যাদায় আজকের এই দিনটি পালন করা হয়েছে।
