আদিবাসী নারীকে বেঁধে নির্যাতন, দুধ খেতে দেওয়া হয়নি ৬ মাসের শিশুকেও

দেশ

সিএইচটি ভ্যানগার্ড, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)

বেঁধে রাখা হয়েছে মাকে, আর ৬ মাসের শিশুটি কাঁদছে ক্ষুধার যন্ত্রণায়

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় চোর সন্দেহে বর্মন সম্প্রদায়ের এক আদিবাসী নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। রোববার রাতে সন্ধ্যা রানী (৩৫) নামে ওই নারী বাদি হয়ে ৫ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন। তিনি উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের মালিরচালা গ্রামের নারায়ণ বর্মনের স্ত্রী।

আসামিরা হলেন- মনিরুল ইসলাম ভূইয়া (৮০), তার দুই ছেলে মোস্তফা ভূইয়া (৪৫) ও সজিব ভূইয়া (৪০) এবং দুই মেয়ে মোছাঃ খুকি (৩৭) ও সুমি আক্তার (৩২)।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সন্ধ্যা রানীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আসামিদের সন্তানদের সঙ্গে তার ছোট ছেলে পলাশ (৮) খেলাধুলা করত এবং ঘুড়ি উড়াত। ঘটানার ১৫ দিন আগে পলাশ ১ নং আসামি মনিরুল ইসলাম ভূইয়ার বাড়ি থেকে ঘুড়ি বানানোর জন্য পত্রিকা নিয়ে আসে এবং তার সন্তানদের সঙ্গে ঘুড়ি উড়ায়। হঠাৎ মনিরুলের বাড়ি থেকে স্বর্ণ ও টাকা-পয়সাসহ মূল্যবান কাগজপত্র চুরি যায়। পরে গত ৩ জানুয়ারি পলাশকে তারা ধরে নিয়ে মারধর করেন এবং মালামাল চুরি করে তার মায়ের কাছে জমা দিয়েছে এ ধরণের কথা বলতে বলে। তা না হলে তার মাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে পলাশ স্বীকারোক্তি দেয়। পরে গত শনিবার মামলার ৪ এবং ৫ নং আসামি সন্ধ্যা রানীর বাড়িতে ঢুকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে করিম ভূইয়ার বাগানে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ৫ আসামি মিলে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়।

এদিকে মামলা করার পর সন্ধ্যা রানী ও তার পরিবারকে আসামিরা হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি জানান। 

এ বিষয়ে মামলার দুই নম্বর আসামি মোস্তফা ভূইয়া বলেন, আমার ছোট বোনের গহনা চুরি করে সন্ধ্যা রানীর ছেলে পলাশ। সে চুরি করা গহনা তার মায়ের কাছে জমা দেয়। বারবার চাইলেও তারা দেয় না। তাই আমার ছোট বোন সুমি সন্ধ্যা রানীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। আমরা কিছু জানি না।

তবে প্রত্যক্ষদর্শী মহানন্দ চন্দ্র বর্মন বলেন, প্রায় চার ঘণ্টা সন্ধ্যা রানীকে বেঁধে রাখা হয়। এসময় সন্ধ্যা রানীর ৬ মাসের শিশু সন্তান অনবরত কান্নাকাটি করেছে। এর মাঝে শিশুটিকে তারা তার মায়ের বুকের দুধও খেতে দেয়নি। পরে দুই বন্ধুর সহযোগিতায় সন্ধা রানীকে উদ্ধার করি। এখন পর্যন্ত তিনি আমার বাড়িতে আছেন।

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাগরদীঘি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক স্বপন বর্মন এ ঘটানার নিন্দা জানিয়ে দোষিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং সমকালকে বলেন, এটি অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘন। সাধারণত গরিব, অসহায়, আদিবাসীদের ওপর সমাজের ধনী মানুষগুলো জুলুম অত্যাচার করে নোংরা আনন্দ পায়। নারী ও শিশুর প্রতি তারা সহিংসতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইন হাতে তুলে নিয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

ঘাটাইল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত কাজ চলছে। আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।

সূত্রঃ সমকাল

Tags: , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

কুতুকছড়িতে বেইলি ব্রিজ ভেঙ্গে পাথর বোঝাই ট্রাক খালে, নিহত ৩
খাগড়াছড়িতে রাজেন্দ্র লাল চাকমা’র স্মরণে শোক সভা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu