সিএইচটি ভ্যানগার্ড
পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি- ১৯০০ বাতিলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ও ১ম-২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে আদিবাসীদের ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবীতে পিসিপি ও সচেতন ছাত্র-যুব সমাজের ব্যনারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ১৭জুলাই ২০২৪ ইং রোজ বুধবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি খাগড়াছড়ি শহরের টাউন হল থেকে শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেঙ্গী স্কোয়ারে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে বিভিন্ন দাবী সম্বলিত প্লেকার্ড ও স্লোগান দেয়া হয় মিছিল থেকে।
সমাবেশে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুভাষ চাকমার সঞ্চালনায় ও সভাপতি মৃনাল চাকমার সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ছাত্র নেতা কৃতিত্ব চাকমা। আরো বক্তব্য রাখেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনতোষ ত্রিপুরা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা (ঝিমিট), যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি জ্ঞান প্রিয় চাকমা, পিসিপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জনসংহতি সমিতির মাটিরাঙ্গা থান কমিটির সভাপতি অমর সিং চাকমা প্রমূখ।
সমাবেশে উপস্থিত থেকে আদিবাসী সচেতন ছাত্র-যুব সমাজের পক্ষে সংহতি বক্তব্য প্রদান করেন কৃপায়ন ত্রিপুরা, মেঘদূৎ ত্রিপুরা এবং ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ (টিএসএফ) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি নয়ন ত্রিপুরা প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আইন, প্রথাগত আইন এবং জুম্মদের রক্ষাকবচ ১৯০০ সালের শাসনবিধি বাতিলের ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে। যার মাধ্যমে জুম্মদের জাতীয় অস্তিত্বকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র বলে আমরা করি। বৃটিশ শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের শাসনের জন্য বৃটিশরা আলাদা আইন প্রণয়ন করে। যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ শত শত বছর ধরে পশ্চাৎপদ। সে কারণে তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও সামাজিক নিয়মগুলো যাতে বিঘ্নিত না হয় তার কারণেই এই আইন তৈরি করা হয়েছিল। যদি এই আইন বাতিল হয় তাহলে ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মুখ থুবড়ে পড়বে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফলে সৃষ্ট আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠান যেমন- কার্বারি, হেডম্যান ও সার্কেল চীফদের (রাজা) প্রথাগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। জুম্ম জনগণ মনে করে এগুলো বাতিল হওয়া মানে তাদের জাতীয় অস্তিত্বকে পুরোপুরি অস্বীকার করে জাতিগতভাবে তাদেরকে নির্মুল করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখা। শুধু বৃটিশ সরকার নয় পাকিস্তান আমলেও পাকিস্তান সরকার এই আইনকে বৈধতা দিয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান সময়ে এসে এই আইন নিয়ে নানা গড়িমসি করা হচ্ছে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারাদেশে ৫০টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী রয়েছে কিন্তু সে সকল জাতিগোষ্ঠীগুলো এখনো এদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সাথে সমানতালে এগিয়ে যেতে পারছেনা। ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন সংগঠিত হলেও সরকার কোটা সংস্কার না করে উল্টো কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয়। ২০১৮ সালের পরবর্তী হতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল হওয়ার ফলে বর্তমান পর্যন্ত আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীদের থেকে শুধুমাত্র ৪জন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিল। আজকে আমরা যদি দেখি আদিবাসীদের মধ্যে দুয়েকটা জাতিগোষ্ঠী কিছুটা অগ্রসর হলেও প্রায় সকল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীগুলো প্রান্তিক, পশ্চাৎপদ ও অনুন্নত। যারা এখনো বর্তমান সমাজব্যবস্থার সাথে তাল মিলাতে পারছেনা তাদেরকে দেশের মূল স্রোতের সাথে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য আদিবাসীদের ৫% কোটা অত্যন্ত প্রয়োজন। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বক্তারা আশংকা প্রকাশ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন এলাকায় যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। দেশটা এভাবে চলতে পারেনা। চলমান অরাজক পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার জন্য অতিশীঘ্রই সরকারের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে রাষ্ট্রের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে অতিশীঘ্রই সুষ্ঠু সমাধানের দাবী জানান বক্তারা, সেই সাথে আন্দোলনরত নিরীহ-নিরস্ত্র কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে যাতে আর কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা সংঘটিত না করা হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান।
উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সালে Rangamati Food Product Ltd. V. Commissioner of Customs and others মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের এ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০’-কে মৃত আইন ঘোষণা করা হয়। তবে এর পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক হাইকোর্ট ডিভিশনের উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে আপীল করা হলে তৎকালীন এ্যাটর্নি জেনারেলের ইতিবাচক অবস্থানের কারণে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ ‘সিএইচটি রেগুলেশন ১৯০০’ এর বৈধতা বজায় রাখেন এবং এই রেগুলেশন একটি সম্পূর্ণ ‘জীবিত ও বৈধ আইন’ বলে ঘোষণা করেন। অপরদিকে ২০১৮ সালে সাম্প্রদায়িক ও জুম্ম বিদ্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী সেটেলার আব্দুল আজিজ আখন্দ Rangamati Food Product Ltd. V. Commissioner of Customs and others মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সিভিল পিটিশন নং-৫৪/২০১৮ মূলে এবং একইভাবে খাগড়াছড়ি নিবাসী সেটেলার আব্দুল মালেক Wagachara Tea Estate Ltd. V. Muhammad Abu Taher and Others মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সিভিল পিটিশন নং-১৯২/২০১৮ মূলে রিভিউ মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলাদ্বয়ে সরকারের অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের প্রদত্ত রায়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রীতি অনুসারে বর্তমান এ্যাটর্নি জেনারেলের অবস্থান গ্রহণ করার কথা থাকলেও তিনি উল্টো উক্ত রায় রিভিউ তথা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০’ এর মৌলিক সংশোধনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যাতে আইনটি অকার্যকর বা মৃত আইনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।