রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি
গতকাল (১৫ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার পূর্বক যথাযথ বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ এবং ন্যায় বিচারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেছে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা- রাঙ্গামাটি।

সকাল ১০ টায় রাঙ্গামাটির কুমার সমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ঘুরে এসে আবার কুমার সমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। সেখানে বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএমএসসি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য ক্যচিংনু মারমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী সুজন চাকমা। সমাবেশে উপস্থিত থেকে সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সদস্য উজাই মারমা, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফোরামের রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সদস্য সবুজ তঞ্চঙ্গ্যা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুমেন চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি সুমিত্র চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সেটেলার গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত সন্ত্রাসী সংগঠন স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির কথায় একতরফাভাবে এনসিটিবি আদিবাসী শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাতিল করেছে। এর মাধ্যমে আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় এনসিটিবি কিংবা ইউনুস সরকারের সক্ষমতা কতদূর। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা ইউনুস তার ভাষণে আদিবাসী শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন। আমরা কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু তার সরকারের দুই-তিন মাস যেতে না যেতেই পূর্বের ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলের চাইতেও আদিবাসীদের উপর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা প্রতিরোধ গড়তে জানিনা। আমরা জুম্ম আদিবাসী ছাত্র জনতা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সদা প্রস্তুত।
বক্তারা আরও বলেন, আজকে এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা প্রতিবাদ করছি যে সময়ে আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে পারছি না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যে স্পিরিট ছিল তারই প্রেক্ষিতে আমরা পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীরা নিরাপদে থাকবো, শান্তিতে থাকবো, আমাদের আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা সুনিশ্চিত হবে এই আশা করেছিলাম। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পর পরই খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সেটেলার বাঙালি কর্তৃক সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। প্রকাশ্যে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। যার বিচার এখনো হয়নি। এরই মধ্যে গতকাল ঢাকায় আদিবাসী ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিলে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর হামলা হয়েছে। আমাদের উপর এই দমন-পীড়ন, শোষণ-বঞ্চনা, নির্যাতন আর কতকাল চলবে? দেশে সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়না। কোনো সরকার উদারতা দেখাতে পারে না।
আদিবাসী জনগণের উপড় যতদিন নিপীড়ন চলমান থাকবে ততদিন বাংলাদেশ বহুজাতির দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না। আমরা নিজেদের আত্মপরিচয় ও অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। অধিকারের প্রশ্নে কোনো আপোষ চলবে না। আদিবাসী ছাত্র সমাজ লড়াই জারি রাখবে। আদিবাসী ছাত্র সমাজ অস্তিত্বের তরে ভবিষ্যতে বনে-জঙ্গলে, রাজপথে যখন যেখানে দরকার সেখানে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
সমাবেশ শেষে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। স্মারকলিপিতে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ৫ টি দাবি উত্থাপন করা হয়। নিম্নে তা তুলে ধরা হল।
১. সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে নৃশংস হামলার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা।
২. হামলায় আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার সরকার কর্তৃক বহন করা।
৩. পাঠ্যপুস্তক থেকে বাতিলকৃত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি পুনর্বহাল করা।
৪. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী জাতিসমূহের সঠিক ইতিহাস ও পরিচিতি তুলে ধরা।
৫. সংবিধানে সকল আদিবাসী জাতিসমূহের স্বীকৃতি দিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।