ভূমি আগ্রাসন, নদী দখল, গুম, খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে শাহবাগে বাজস ও পিসিপি’র সমাবেশ

জাতীয়

ঢাকা প্রতিবেদক

সারাদেশে অব্যাহত ভূমি আগ্রাসন, নদী দখল, গুম, খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জনতা সংসদ (বাজস) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)। আজ ১২ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪ ঘটিকার সময়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

বক্তারা পাহাড় ও সমতলে প্রতিনিয়ত পর্যটন কেন্দ্র ও ইকো পার্কের নামে রাষ্ট্রীয় ও বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল কর্তৃক ভূমি বেখলের তীব্র নিন্দা জানান। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের ভূমি বেদখল ও বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। একই সাথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, নদী দখল, গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও নারীদের উপর নিপীড়ন বন্ধে গণ আন্দোলন ও জন সচেতনতায় এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

জেএসএস খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটি’র সভাপতি প্রত্যয় চাকমা টাঙ্গাইলের মধুপুরের শালবনে গারো জনগোষ্ঠীদের ভূমি দখল করে বিনোকেন্দ্র স্থাপন ও বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ের ম্রো জনগোষ্ঠীর ভূমিতে সিকদার গ্রুপ ও সেনা কল্যাণ ট্রাস্টের পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা ও অবিলম্বে এসব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাসভূমিতে নির্মিত হওয়া বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন বন্ধের আহ্বান জানান। পাহাড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশন সচল করে ভূমি সমস্যা নিরসণ এবং সমতলীয় আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠন করে তাদের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বিভিন্ন সুশীল সমাজ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হলেও আজ পর্যন্ত এসব বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন আজও বন্ধ হয়নি, যা খুবই হতাশাজনক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পিসিপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমেধ চাকমা বলেন, ভাষার জন্য বাঙালি জাতি প্রাণ দিয়েছে, এ বছর মহান ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পূর্ণ হবে; কিন্তু ভাষার জন্য প্রাণ দেয়া এই বাংলাদেশে ৫০টি’র অধিক ভিন্ন ভাষাভাষী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষা চালু করতে পারেনি। শুধুমাত্র পাঁচটি ভাষায় (চাকমা, মারমা,ত্রিপুরা, গারো, সাদ্রী) তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত চালু হলেও শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে তাও ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগের আহ্বান জানান।

বাজস কেন্দ্রীয় কমিটি’র সংগ্রামী সভাপতি মাহফুজুর রহমান শামীম বলেন, করোনার সময়কালে দেশে নারীদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে, বিরুদ্ধ মতকে দমাতে গুম করা হচ্ছে এসব কিছুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব সংরক্ষণে তাদের ভূমিতে পর্যটন স্থাপন বন্ধ করা এবং তাদেরকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির আহ্বান জানান। দেশে ৫৭ ধারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে বলে উনি উল্লেখ করেন এবং এই কালো আইন বাতিলের দাবী জানান।

জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ সমাপ্ত করে মিছিল বের করা হয় এবং রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। সমাবেশ ও মিছিলে ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণ, গুম, খুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্লেকার্ড প্রদর্শন ও স্লোগান দেয়া হয়।

এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাজস কেন্দ্রীয় কমিটি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রিদওয়ান নোমানী, বাজস কেন্দ্রীয় কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক অয়ন আব্দুল্লাহ, প্রজাপতি আন্দোলনের ওয়ালিদ আশ্রাফ প্রমূখ।

Tags: , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

আশ্রয়ণের নামে মারমা পাড়ায় বাঙালিদের পুনর্বাসন
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষার জন্য কী করব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu