বাঘাইহাটে নাঈম হত্যাঃ ইউপিডিএফের নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবী

রাঙ্গামাটি

বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি ভ্যানগার্ড

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাটে নিহত মো: নাঈম (৩৫) হত্যায় জড়িত ইউপিডিএফের বেশ কয়েকজন নেতার নাম উল্লেখ করে একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ইউপিডিএফ নেতাদের দ্রত আইনের আওতায় নিয়ে গ্রেফতার করার জোর দাবী করেছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কিছুদিন আগে ২০/২৫ জন জেএসএস (এমএন) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর নেতা কর্মী সাজেক এলাকায় সাংগঠনিক কাজে যায়। তারা সাংগঠনিক কাজের সুবিধার্থে সর্বশেষ বাঘাইহাট বাজারের আশে পাশে অবস্থান করছিল। সে খবর জানার পর ইউপিডিএফ (প্রসিত) গ্রুফের একটি সশস্ত্র গ্রুফ তাদের অবস্থান লক্ষ্য করে বেশ কয়েকবার হামলা করার পরিকল্পনা নেয়। বারংবার চেষ্টার পরও হামলা চালাতে ব্যর্থ হলে গত ১৮/০৬/২০২৪ ইং তারিখে জরুরী মিটিং আছে বলে প্রত্যক গ্রাম থেকে ৩০/৩৫ জন করে বনানী বন বিহার গেইট এলাকায় উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়। অপেক্ষমান লোকজনের সামনে এসে ইউপিডিএফ পরিচালক অক্ষয় চাকমা বলেছেন, বাঘাইহাট বাজারের আশে পাশে জেএসএস (এমএন) ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর নেতা কমী অবস্থান করছে। সেখান থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করতে হবে। বিতারিত করতে না পারলে আমাদের সংগঠনের জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছি। তারা যদি এই বাঘাইহাট বাজারে আস্থানা করে বসে তাহলে আমাদের সংগঠন ইউপিডিএফের গলার কাটা হয়ে উঠবে। সেজন্য তাদেরকে তাড়ানোর জন্য এখনই তাদের আস্তানায় হামলা চালাতে হবে এবং সবাইকে গন ধোলাই দিয়ে মেরে ফেলতে হবে। এ ঘোষণা দেওয়ার পর পর গেইটের পাশে রাখা (আগাম কেটে রাখা হয়েছে) বাঁশ ও গাছের লাঠি বের করে প্রত্যকের হাতে একটি করে ধরিয়ে দেয় ইউপিডিএফের লোকজন।

সূত্র আরো জানায়, বনানী বন বিহার গেইট থেকে মিছিল শুরু করার আগে বাঘাইহাট বাজারের আশে পাশে ইউপিডিএফের ৫০/৬০ জন অস্ত্রধারী সাদা পেশোকে বাঘাইহাট গুচ্চগ্রাম ও বাইবাছড়া গ্রামে অবস্থান নিয়েছিল। আবার মিছিলের মাঝখানে আর পিছনে সাদা পোশাকে ১০ থেকে ১২ জন অস্ত্রধারী গামছায় মোড়ানো অবস্থায় অস্ত্রগুলো ঝুলিয়ে নিয়েছিল। অস্ত্রগুলো এমন ভাবে নিয়েছিল যেন দূর থেকে কেউ দেখলেও ছিনতে না পারে। মিছিলে ইউপিডিএফের নারী সংগঠনের কর্মীরাও অংশ নিয়েছিল। এছাড়া তাদের সংগঠনের কর্মীদের ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীদেরকেও মিছিলে যোগদান করতে বাধ্য করা হয়েছিল। মিছিল যখন বাঘাইহাট বাজারের আশে পাশে গিয়ে পৌঁছায় তখন ৫/৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে মিছিলের সাথে থাকা অস্ত্রধারীরা। এরপর মিছিলকারীরা দুই দলের নিরস্ত্র কর্মীদের অবস্থানের কাছাকাছি গিয়ে ছাদের উপরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। বাড়ির দরজা জানালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। সে আশে পাশে কয়েকটি খাবার হোটেল ও আবাসিক হোটেল এবং দোনপাটের উপর লাঠি সোটা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা আগুন লাগিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে। তখন ভয়ে দুই দলের কর্মীরা কিছুক্ষণের জন্য নিরব হয়ে যায়। তবুও মিছিলকারীরা হামলা ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ থামায়নি। এভাবে বেশ কয়েক দফা হামলা করে দুই দলের কর্মীদের উপর। তখন দুই দলের নিরস্ত্র ঐ কর্মীরা অসহায় হয়ে পরে। প্রকাশ্য দিবালোকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশে এমন হামলার পরও দুই দলের কর্মীদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি।

বিকাল ২টা। বেশ কয়েক দফা হামলার পর আক্রমণকারীরা যখন ক্ষুধায় নাজেহাল হয়ে বাড়ি ফিরছিল ঠিক সে সময় ইউপিডিএফের অস্ত্রধারীরা হামলাকারীদের গতি রোধ করে আবারো দুই দলের নিরস্ত্র কর্মীদের উপর ঝাঁপিয়ে পরতে নির্দেশ দেয়। আবারো মিছিল থেকে শ্লোগান দিতে দিতে দুই দলের অবস্থানে পৌঁছলে মনোবল ফিরানোর জন্য ইউপিডিএফের সশস্ত্র গ্রুফের কমান্ডার বিপ্লব চাকমা ও রমেশ চাকমা প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। তারপরও দুই দলের কর্মীদেরকে তাদের জায়গা থেকে বের করে আনা সম্ভব না হওয়ায় রাস্তার উল্টা দিকে গিয়ে ইউপিডিএফ কমান্ডার বিপ্লব চাকমা, রমেশ চাকমা ও কমান্ডার রুমি চাকমা বাড়ির জানালার উপর ও মেইন গেইট এবং দরজার উপর মুহু মুহু ব্রাশ ফায়ার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা মনে করেছিল উল্টা দিক থেকে আক্রমণ করলে মেইন দরজা দিয়ে অবশ্যই পালিয়ে যাবে। তখন ব্রাশ ফায়ারের শব্দ শুনে হামলাকারীরা মনে করেছিল অপরদিক থেকে তাদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে। ভয়ে তারা দিকবিদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা প্রাণ বাঁচাতে দুই দলের কর্মীদের উপর হামলা না করে বাঘাইহাট বাজার ত্যাগ করে চলে যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইউপিডিএফ এর ৪ জন অস্ত্রধারী ও ৮০/৯০ জন নিরস্ত্র হামলাকারী আবারো ঐ বাড়িতে থাকা কর্মীদের উপর আক্রমণ করে। আক্রমনের এক পর্যায়ে বেশ কয়েকবার ব্রাশ ফায়ারের শব্দ শুনতে পাই। আমরা তখন দোকানের ভিতরে অবস্থান করছি। উপর্যপরি যখন ব্রাশ ফায়ার হচ্ছে তখন আমাদের মধ্যেও ব্যাপক ভয় ভীতি এসেছিল। তখন আমরা দোকানের খাটের নিচে ঢুকে গেছি। ব্রাশ ফায়ার যখন থেমে যায় তখন বের হয়ে দেখি ইউপিডিএফের লোকজন ২/৩ জন পাহাড়ীকে (চাকমা) পাজাকোলা করে নিয়ে যাচ্ছে। আবার বেশ কয়েকজন মহিলা কান্নাকাটি করে দৌঁড়ে দৌঁড়ে যাচ্ছে। আর অস্ত্রধারী ৪ জনকেও তাদের সাথে যেতে দেখেছি। তাদের মূখ কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল। তবে অস্ত্রগুলো উচিয়ে যেতে দেখেছি। তারা ঐ আহতদেরকে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারপর তারা ঐ ঘটনাস্থলের দিকে গিয়ে দেখেন একটা বাঙালি ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন। তখন তাকে ধরাধরি করে সিএনজিতে তুলে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যেতে দেখেছি। পরে জানা গেছে ঐ ছেলেটি শান্তি পরিবহনের সুপারভাইজার মো: নাঈম (৩৫)। তবে হাসপাতালে পৌছানোর আগে গুলিবিদ্ধ ছেলেটি মারা যায়।


স্থানীয়রা জানান, মূলত ইউপিডিএফ সর্বশেষ অপর দিকে গিয়ে যে ব্রাশ ফায়ার করেছিল সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে নাঈম ও তাদের কর্মীদের উপর লেগেছিল। এখন দোষ ছাপাচ্ছে জেএসএস (এমএন) ও ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) দলের উপর। নিজেদের দোষ দুই দলের উপর চাপাতে সস্তায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে এবং বাঙালিদের আনুকল্য পাওয়ার জন্য তারা তড়িগড়ি করে নাঈম হত্যার দায়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। যাহাতে বাঙালিরা মনে করে ইউপিডিএফের গুলিতে মারা গেলে নাঈম হত্যার জন্য তারা মিছিল সমাবেশ করতো না। তারপরও ইউপিডিএফের গুরিতে যে নাঈম মারা গেছে তা সত্যই প্রমাণিত হল।

এ ঘটনায় (গোপনীয়তার স্বার্থে) থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ইউপিডিএফের নেতা/কর্মীদের নাম রয়েছে। এদিকে নিহত শান্তি গাড়ির সুপারভাইজার মো: নাঈম (৩৫) হত্যা মামলায় জড়িত ইউপিডিএফ কিলারদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য এলাকাবাসী ও পরিবারের পক্ষ থেকে জোর দাবী জানানো হয়েছে।

এছাড়া হত্যায় জড়িত ইউপিডিএফ নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করা না হলে জেএসএস (এমএন) ও ইউপিডিএফ (গনতান্ত্রিক) এ দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচীর ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে। সংগঠন দুটির দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

Tags: , , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

জেএসএস এর মহালছড়ি ও নানিয়ারচর থানা সম্মেলন সম্পন্ন
পিসিপি’র ২১তম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ও প্রতিনিধি সম্মেলন উনুষ্ঠিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu