ঢাকা প্রতিবেদক
“জন্মভূমি ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে এম.এন. লারমার চেতনায় ছাত্র সমাজের আদর্শীক ভিত্তি সুদৃঢ় হোক” এই স্লোগানকে সামনে রেখে আজ রবিবার (২৮ মাার্চ ২০২১) পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগর শাখার ৪র্থ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ সকাল ১০ ঘটিকার সময় রাজধানী ঢাকার পরীবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের হলরুমে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক আম্বেদকর চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জনতার সংসদের(বাজস) কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি মোঃ মাহবুবুর রহমান শামীম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রতিভাস চাকমা ও সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রী জ্ঞানপ্রিয় চাকমা, জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা ও ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের প্রভাষক মোঃ জহির উদ্দীন সোহাগ প্রমূখ।
বক্তারা দেশে চলমান অরাজক পরিস্থিতির উপর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দলমত নির্বিশেষে অধিকার আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, নারী নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, নৈরাজ্য সৃষ্টি উল্লেখ করে বক্তারা এসব সমস্যা নিরসনে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বক্তারা আরও বলেন, দেশে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী চলছে কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ এদেশের জনগণ পাচ্ছেনা। সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে দেশ এক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এদেশে এখন গণতন্ত্র সংকট চলছে, কথা বলার অধিকার নেই, রাজনৈতিক অধিকার নেই, সত্য বলার অধিকার নেই। হামলা, গুম, হত্যা, রাহাজানিতে ভরে গেছে। দুর্নীতিতে ভরে গেছে গোটা দেশ। গত কয়েকদিন আগে সুনামগঞ্জের শাল্লার নাওগাঁওয়ে হিন্দু পল্লীতে সাম্প্রদায়িক হামলার কথা উল্লেখ করে বক্তারা সেসব হামলায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক সর্বোচ্চ দাবী জানিয়েছে।
সম্মেলন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের প্রাণের দাবী পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি সমস্যা উল্লেখ বক্তারা ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ভূমি সমস্যা সমাধানে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের কথা বলা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল, পর্যটন-ইকোপার্কের নামে জুম্মদের ভূমি বেদখলের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। চিম্বুকের নাইতং পাহাড়ে ম্রোদের ভূমি বেদখল করে পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ বন্ধের দাবী জানান বক্তারা। বান্দরবানে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে নদী-ঝিরিগুলো শুকিয়ে মরে যাচ্ছে এবং পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট তৈরি হচ্ছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ ও পাহাড়ের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার্থে সেসব পাথর ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানানো হয়।
সম্মেলনের শেষে সকলের সম্মতিক্রমে শ্রী আম্বেদকর চাকমাকে সভাপতি, শ্রী মুক্ত চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী এল্টন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন ঢাকা মহানগর শাখা কমিটি গঠন করা হয়। সম্মেলনে প্যানেল উপস্থাপন ও নবাগত কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমা।