পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির ১৮ তম সম্মেলন সম্পন্ন

খাগড়াছড়ি

সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি

জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন

“পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্র সমাজের ইস্পাত-কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলুন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির ১৮তম সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। আজ (২৬ আগস্ট ২০২২) শুক্রবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরস্থ খাগড়াপুরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

১৮তম জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সংগ্রামী সদস্য সচিব শ্রী কৃতিত্য চাকমার সঞ্চালনায় ও আহ্বায়ক সুনয় চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতি’র কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা মহোদয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা, জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা, জনসংহতি সমিতি মাটিরাংগা থানা কমিটি সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী দীপু চাকমা; যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী জ্ঞান প্রিয় চাকমা ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট) প্রমূখ।

এছাড়াও সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

মৌনব্রত পালন করছেন নেতৃবৃন্দরা

সম্মেলনের শুরুতে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন খাগড়াছড়ি জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সংগ্রামী সদস্য শ্রী সুভাষ চাকমা। এছাড়াও সংগঠনের বিভিন্ন শাখা কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দরা বক্তব্য প্রদান করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট) বলেন- পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু পূর্ব হতে শাসন-শোষণ চলছে। জুম্ম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার ষড়যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে। সুতরাং এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলার জন্য পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। সেজন্য প্রথমে ছাত্র পরিষদের প্রতিটি কর্মীকে সৎ, নীতিবান, আদর্শবান, বিনয়ী ও সংগ্রামী হতে হবে এবং পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য জুম্ম ছাত্র সমাজের কাছে পৌঁছে দিয়ে লড়াই-সংগ্রামের জন্য তাদেরকেও প্রস্তুত করতে হবে। ৮৯’র অগ্নিঝরা রক্তাক্ত সেই পরিবেশে যেমন গড়ে উঠেছিল পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তেমনি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তার সংগ্রামী কার্যক্রমে জয় করেছিল সমগ্র জুম্ম জনগণের হৃদয়। সেই গৌরবোজ্জ্বল লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসকে অক্ষুণ্ণ রাখতে দুর্বার সংগ্রামে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে এগিয়ে যেতে হবে। একদিকে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত অন্যদিকে শাসকগোষ্ঠীর তালবাহানায় জুম্ম জনগণের অর্থনৈতিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক জীবন বিপর্যস্ত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্র সমাজকে নিতে হবে গুরু দায়িত্ব। পৃথিবীব্যাপী যখন কোন দেশ বা জাতির উপর বিপর্যয় নেমে তখনি তরুণ-ছাত্র সমাজ তার মোকাবিলা করেছে। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৪ শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৮৯’র পিসিপি’র উত্থান, ৯০’র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যেভাবে ছাত্রসমাজ ভূমিকা রেখেছে ঠিক তেমনি জুম্ম জনগণের এই দুর্দিনেও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ তথা জুম্ম ছাত্র সমাজকে ভূমিকা রাখতে হবে।

বক্তব্য রাখছেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট)

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রী প্রত্যয় চাকমা বলেন- যৌবন যার যুদ্ধে যাবার সময় তার একই সাথে যৌবন যার ক্যারিয়ার গড়ার সময় তার। এই ছাত্র-তরুণ বয়সেই নিজেকে আগামীর জন্য গড়তে হবে। নিজেকে পাকাপোক্ত করার সময় এই ছাত্র ও যৌবন বয়স। জুম্মদের সমাজের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ আজও তার আপন স্বমহিমায় পাহাড়ে নিজেদের আন্দোলন জারি রেখেছে। রক্ত পচ্ছিল সংগ্রামী পথ পেরিয়ে জুম্ম ছাত্র সমাজ তথা জুম্ম জনগণকে সাথে নিয়ে ৩৩টি বছরের পথচলায় অনেক ছাত্রনেতা নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন, কেউ পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। আমাদের অগ্রজ যারা আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন শুরু করেছেন তাদের আদর্শ যেহেতু আমরা ধারণ করেছি সেহেতু চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে আমাদের মরণপণ ঝাপিয়ে পড়তে হবে।

মঞ্চে উপবিষ্ট নেতৃবৃন্দ

প্রধানি অতিথির বক্তব্যে শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা বলেন- আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে যে জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে শুরু হয়েছিল এতবছর পরও সেই জায়গাতেই পড়ে আছি। আজও তার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। কাজেই আমাদের আন্দোলন চালিয়ে নিতে হবে অবিরতভাবে। পৃথিবীতে পরিবর্তন ও ঠিকে থাকার জন্য সবসময় সংগ্রাম করে যেতে হয়। ডারউইনের ভাষায়, যোগ্যতমরাই পৃথিবীতে ঠিকে থাকে আর যারা অযোগ্য তারা হারিয়ে যায় মহাবিশ্বের অতল গহ্বরে। সেজন্য আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখতে আগে নিজেকে যোগ্যতম করে গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের যোগ্যতমভাবে প্রস্তুত করতে পারলে আমাদের যে উদ্দেশ্যে এ আন্দোলন সে আন্দোলনে সফল হবো। সুতরাং নিজেদের আগে প্রস্তুত করুন জাতীয় মুক্তির আন্দোলনের জন্য।

সম্মেলনে ১৮তম খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির প্যালেন উপস্থাপন করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী সোহেল চাকমা(বিজগ); প্যানেল উপস্থাপনের পর প্যানেলের উপর কারোর আপত্তি না থাকায় সকলের সম্মতিক্রমে কমিটি চূড়ান্ত ঘোষণা করা হয়।

১৮ তম খাগড়াছড়ি জেলা কমিটিতে শ্রী মৃণাল কান্তি চাকমাকে সভাপতি, শ্রী সুভাষ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী সুমতি বিকাশ চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। নবাগত খাগড়াছড়ি জেলা কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী সোহেল চাকমা (বিজগ)।

নবাগত কমিটিকে শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে বরণ করে নেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী সুনেন্টু চাকমা, জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা মহোদয়।

এরপর ১৮তম খাগড়াছড়ি জেলা সম্মেলনের সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুনয় চাকমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মলনে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Tags: , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

লামায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভূমি বেদখল ও ব্যবহৃত পানির উৎসে বিষ প্রয়োগের প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপি’র বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
তাতিন্দ্র লাল চাকমা’র ২য় মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu