খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
ভাষা ও সংস্কৃতি একটি জাতির আত্মপরিচয়- “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত কর” এই প্রতিপাদ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে খাগড়াছড়ি সদরস্থ তেঁতুলতলা মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে এই দাবী জানানো হয়।

সমাবেশের শুরুতে সংগঠনটির উদ্যোগে খাগড়াছড়ি সদরের মিলনপুর থেকে র্যালী যোগে খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে ভাষা শহীদদের স্মরণে পূষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য মনোতোষ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় এবং উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সুনেন্টু চাকমার সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ভলাস ত্রিপুরা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা, হিল ইউমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মায়া চৌধুরী। সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন যুব নেতা জলন্ত চাকমা, রহেল চাকমা, ছাত্র নেতা মৃনাল চাকমা, সুমতি বিকাশ চাকমা প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে স্বীকৃতির আগ পর্যন্ত দিবসটি শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হতো কিন্তু জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত হলে জাতিসংঘের সদস্য দেশ সমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। মাতৃভাষার জন্য রক্ত ঝড়ার ঘটনা বিরল। নিজেদের মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায়ে যে জাতি এই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল সেই জাতি অন্যান্য জাতিসমূহের মাতৃভাষাগুলোর প্রতিও সমান সম্মান দেখাবেন এটা স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ভাষার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত থাকা জাতির এই বাংলাদেশে অপরাপর জাতিগোষ্ঠীগুলোর মাতৃভাষা এবং সংস্কৃতি সুরক্ষিত নয়।
বক্তারা আরও বলেন, ১৯৯৭ সালে সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির খ খন্ডের ৩৩নং ধারার খ উপধারার ২ নং অনুচ্ছেদে মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও চুক্তির ২৬টি বছর অতিক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের এখন পর্যন্ত নিজেদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি সরকার। বাজেট বরাদ্দ না থাকায় যে তিনটি মাতৃভাষায় বই বিতরণ করা হয় সে সকল বিষয়ে পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। তাই বছরের শুরুতে আদিবাসী শিশুদের বই বিতরণরত রাষ্ট্র প্রধানের হাস্যোজ্জ্বল ছবি অনেকটায় আদিবাসীদের নিজেদের ভাষায় পড়তে পারার অধিকারের সাথে তামাশা করার শামিল।
সভায় বক্তারা উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান রাখেন – নিজেদের অধিকারের বিষয়ে নিজেদেরকেই আগে সচেতন হতে হবে, সে অনুযায়ী নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে প্রয়োজনে লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে।
এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বাৎসরিক প্রকাশনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫, উন্মেষ ৯ম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
আলোচনা সভা থেকে ৭ দফা দাবী উত্থাপন করা হয়ঃ
১। সকল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর স্ব-স্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
২। যে সকল জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার লেখ্যরুপ নেই সে সকল ভাষার বর্ণমালা উদ্ভাবন করতে হবে।
৩। সকল মাতৃভাষার পর্যাপ্ত শিক্ষক, শ্রেণী কক্ষ, সাধারণ ক্লাস রুটিনের সাথে অন্তর্ভুক্ত ও পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৪। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিতপূর্বক স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৫। ১ম-২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরি ও দেশের সকল উচ্চমান সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসীদের ৫% কোটা পুনর্বহাল করতে হবে।
৬। আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
৭। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঢাকা:
ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এল্টন চাকমার নেতৃত্বে একুশের প্রথম প্রহরে সকল ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।


চট্টগ্রাম: সকল ভাষা শহীদদের স্মরণে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার উদ্যোগে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।