সিএইচটি ভ্যানগার্ড, মহালছড়ি প্রতিনিধি
“পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে ছাত্র ও যুব সমাজ এগিয়ে আসুন” এই স্লোগানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্র ও যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২০শে মে ২০২৪ইং খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার ক্যায়াংঘাট ইউনিয়নের ক্যায়াংঘাট জুনিয়র হাই স্কুল প্রাঙ্গণে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০ ঘটিকার সময় জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বেলুন উড়িয়ে ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছাত্র ও যুব সমাবেশের শুভ উব্দোধন করা হয়।
ছাত্র ও যুব সমাবেশে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সংগ্রামী সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট) চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমতি কাকলী খীসা। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী অংশুমান চাকমা। এছাড়াও সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা শ্রী প্রীতি খীসা, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা শ্রী প্রত্যয় চাকমা, জনসংহতি সমিতি মহালছড়ি থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী নীল রঞ্জন চাকমা, যুব সমিতির সংগ্রামী সভাপতি ও সাবেক ছাত্র নেতা শ্রী জ্ঞানপ্রিয় চাকমা।
সমাবেশের শুরুতে গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ৩৫ বছরে এযাবতকাল ধরে যে সকল কর্মীবাহিনী নিজেদের অমূল্য জীবন দান দিয়ে গেছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন এবং জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আত্মবলিদানকারী সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি পূর্বেকার যে কোনো সময়ের তুলনায় অত্যন্ত নাজুক। সীমান্ত সড়ক নির্মাণের নামে ভূমি বেদখল, জুম্মদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ ইত্যাদিভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। জুম্ম দালালেরা উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে চীনে জুম্ম নারী পাচার করছে, এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আমরা আরো দেখতে পাই ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন তৎকালীন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলাকে কোর্ট থেকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এই যে অপহরণকারীদের নামগুলো প্রকাশ্য আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে দীর্ঘ ২৭টি বছর পর তারা মামলাটি খারিজ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্র ও যুব সমাজকে সচেতন হতে হবে এবং এ সব অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করণের ষড়যন্ত্র দেশ স্বাধীনের পর হতে চলে আসছে। অমুসলিম অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করার যে নীলনকশা সে নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আজকে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি অকার্যকর বা বাতিলের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এ আইন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ঐতিহাসিক, ঐতিহ্যগত, প্রথাগত ও বিশেষ অধিকারের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ আইন অকার্যকর বা বাতিল হলে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ এবং সিএইচটি রেগুলেশনের সৃষ্ট প্রথাগত প্রতিষ্ঠানসমূহ সংকটের মুখে পড়বে। উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল, পর্যটনের ভূমি বেদখল, জুম্ম নারীদের উপর যে শ্লীলতাহানি চলমান রয়েছে এর বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার হতে হবে।
দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও আজকে চুক্তি সম্পাদনের দীর্ঘ ২৬টি বছর অতিক্রান্ত হলেও সে চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ রাষ্ট্র গ্রহণ করেছেনা। পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি সমস্যা, চুক্তি অনুযায়ী ভূমি কমিশন গঠনের মাধ্যমে সমাধানের কথা থাকলেও তা এখনো অধরা রয়ে গিয়েছে। যার কারণে ভারত প্রত্যাগ শরনার্থী এবং ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের ফলে আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুরা এখনো মানবেতর জীবন যাপন করছে। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী সমাধান হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। সে কারণে তরুণ সমাজকে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে মরণপন ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।