সিএইচটি ভ্যানগার্ড
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এক ছাত্র ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। “জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী, উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী কার্যক্রমসহ সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ছাত্র- যুব সমাজ রুখে দাঁড়ান”। এই স্লোগানে আজ ২০শে মে ২০২৩ইং সকাল ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরের কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ ছাত্র ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্র ও গণসমাবেশের প্রধান অতিথি মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক ও মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান শ্রী বিমল কান্তি চাকমা। এবং দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট)।
এরপর বেলুন উড়িয়ে ৩৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ছাত্র ও গণসমাবেশ উদ্বোধন করেন আজকের সমাবেশের প্রধান অতিথি শ্রী বিমল কান্তি চাকমা।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী সোহেল চাকমার সঞ্চালনায় ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমার (ঝিমিট) সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রণব চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী তথ্য ও প্রচার বিষয়ক সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা, জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমতি কাকলী খীসা, সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা আহ্বায়ক কমিটির সংগ্রামী সদস্য সচিব শ্রী জুপিটার চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা, সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা ও জনসংহতি সমিতি মাটিরাঙ্গা থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী অমর সিং চাকমা, সাধারণ সম্পাদক দীপু চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা ও যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী জ্ঞান প্রিয় চাকমা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী ববিতা চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা আম্বেদকর চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা প্রতিভাস চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা জগদীশ চাকমা, সাবেক ছাত্র নেতা রাজ্যময় চাকমা প্রমূখ। এছাড়াও ছাত্র সমাবেশ মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দসহ যুব সমিতি, মহিলা সমিতি ও পিসিপি’র বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশের শুরুতে অতিথিবৃন্দদের ব্যাজ পরিধানের মাধ্যমে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের এযাবতকালের সকল শহীদ ও জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে যারা নিজেদের আত্মবলিদান দিয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্যহ শ্রী সুভাষ চাকমার বক্তব্যের মাধ্যমে ছাত্র ও গণসমাবেশের সূচনা করা হয়।

গণসমাবেশে প্রধান অতিথি শ্রী বিমল কান্তি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ২৬ বছর হতে চলেছে কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে তা এখনো অবাস্তবায়িত। এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আগামী দিনে জুম্ম ছাত্র ও তরুণ সমাজকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষা-দীক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে প্রগতিশীল চিন্তাধারা লালন করে নির্ভুল চিন্তাধারার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে নেতৃত্ব দিতে হবে এবং জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণে কঠিন থেকে কঠিনতর সংগ্রামে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এবং জুম্ম ছাত্র সমাজ ঝাঁপিয়ে পড়বে। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামে দিন দিন জুম্মদের ভূমি বেদখল হচ্ছে, ভূমি সমস্যা জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। অন্যদিকে সরকার দলীয় অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা জেলা পরিষদ পরিচালিত হওয়ার কারণে চাকরি বাণিজ্য ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে, দুর্নীতি ও ঘুষের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বক্তারা বলেন, একদিকে সরকারের চুক্তি বাস্তবায়নের সদিচ্ছার অভাবে চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ের পরিস্থিতি দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে অন্যদিক ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে পাহাড়ী জনপদে এক বিরাট সংকটময় অবস্থা বিরাজ করছে যা জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব বিলুপ্তির রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র। জুম্মদের ভূমি বেদখল, জুম্ম নারী ধর্ষণ, সহজ সরল জুম্মদের অর্থের লোভের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরিতকরণ, লাভ জিহাদের ফাঁদে ফেলে জুম্ম মেয়েদের ধর্মান্তরিতকরণ ইত্যাদি বিষয় চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয় যে রাষ্ট্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত করে জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মূল করা। পাহাড়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সশস্ত্রগোষ্ঠী সৃষ্টি করে রাষ্ট্রের একটি বিশেষ মহল পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামকে ধ্বংস করে দেয়ার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে বলেও বক্তার অভিযোগ করেন। বক্তারা অবিলম্বে চুক্তি বাস্তবায়নে কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণার দাবী জানান।

বক্তারা আরো বলেন, ৩৪টি বছর আগে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া এই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে রাজপথের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ন্যায্য অধিকারের দাবী জানিয়ে আসছে। সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সবসময় রুখে দাঁড়িয়েছে। অনাগত দিনের লড়াই সংগ্রামে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ নিবেদিতপ্রাণ হয়ে নিজেদের সঁপে দেবে।
সবশেষে ৩৪তম আজকের ছাত্র সমাবেশের সংগ্রামী সভাপতি ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমার(ঝিমিট) সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য যে, ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদুতে সেটেলার বাঙ্গালীরা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় জুম্মদের উপর নির্মম হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। এ হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৮৯ সালের ২০শে মে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত জুম্ম শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) রশিদ হলের ২০০২ নং রুমে মিলিত হয়ে গঠন করে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ। এবং ২১শে মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবীতে একটি মৌন মিছিলের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে জুম্ম ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী এই সংগঠনের।