সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি
ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (২ ডিসেম্বর ২০২১) সকাল ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরের মিলনপুরস্থ মারমা উন্নয়ন সংসদ কমিউনিটি সেন্টারে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভায় জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমার সঞ্চালনায় জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি ও ২রা ডিসেম্বর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক শ্রী আরাধ্য পাল খীসার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রী সুভাষ কান্তি চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী বিভূ রঞ্জন চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রণব চাকমা।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী সিন্ধু কুমার চাকমা। আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি রত্না তঞ্চঙ্গ্যাঁ; পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রী জ্ঞান প্রিয় চাকমা; পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী রাজ্যময় চাকমা; বন্ধুপ্রতীম সংগঠন গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী মিটন চাকমা; শরনার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী সন্তোষিত চাকমা (বকুল), উপজাতি ঠিকাদারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি শ্রী রবিশংকর তালুকদার প্রমূখ। এছাড়াও জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয়, জেলা,থানাসহ ছাত্র-যুব-মহিলা সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ ও হাজার হাজার জুম্ম জনতা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালের ০২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীর মধ্যেকার রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান হয় এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির কিছু কিছু ধারা বাস্তবায়িত হলেও মৌলিক ও অধিকাংশ ধারা আজও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। বিশেষ করে চুক্তির মৌলিক ধারাগুলোকে অবাস্তবায়িত করে রাখা হয়েছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে আজও শান্তি ফিরে আসেনি। এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের কথা থাকলেও সরকারের সদিচ্ছার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। পাহাড়ের মূল সমস্যা ভূমি সমস্যা উল্লেখ করে ভূমি কমিশনের বিধিমালা যথাযথভাবে প্রণয়নপূর্বক অতি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান।
তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আদৌতে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৮টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, অবশিষ্ট ২৯টি সম্পূর্ণভাবে অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। সর্বোপরি চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, ইদানিংকালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক ও সংকটাপন্ন। পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি নির্মূলীকরণের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই লক্ষাধিক একর ভোগ দখলীয় জুমভূমি ও মৌজাভূমিকে একতরফাভাবে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা, বহিরাগতদের নিকট হাজার হাজার একর ভূমি ইজারা প্রদানের নামে হাজার হাজার ভূমি অধিগ্রহণ, পর্যটন শিল্প বিকাশের নামে শত শত একর পাহাড় বেদখল ও বহিরাগতদের অব্যাহত বসতি প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে জুম্ম জনগণকে তাদের চিরায়ত ভূমি ও বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অদ্যাবধি নানা কায়দায় শোষণ, নিপীড়ন, অবিচার, বঞ্চনা ও গ্লানি তথা উগ্র জাতীয়তাবাদ, ইসলামি সম্প্রসারণবাদের চরম প্রতারণা ও বিশেষ মহলের প্রভাব অব্যাহত রয়েছে।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়াস্থ এমএনলারমা ভাস্কর্য থেকে র্যালি আকারে বিশাল জনসমাবেশ নিয়ে মারমা উন্নয়ন সংসদ কমিউনিটি সেন্টারে সমাবেশস্থলে যোগদানের নির্ধারিত কর্মসূচি থাকলেও একটি বিশেষ মহলের অপতৎপরতায় আমরা র্যালি করতে পারিনি। আগামীতে এইসব অপতৎপরতা ও অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে যখন যা যা প্রয়োজন তখন তা তা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।