পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীতে খাগড়াছড়িতে পিসিজেএসএস’র র‍্যালি ও সমাবেশ

দেশপার্বত্য চট্টগ্রামসংবাদ

সিএইচটি ভ্যানগার্ড, খাগড়াছড়ি

ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তি আজ। দিবসটি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীতে খাগড়াছড়িতে র‍্যালি ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। বুধবার সকাল ৯ঘটিকার সময়ে খাগড়াছড়ি সরকারি স্কুল মাঠ প্রাঙ্গনে সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ জুম্ম জনতা দলে দলে জড়ো হয়। এবং স্কুল মাঠ প্রাঙ্গন থেকে র‍্যালি শুরু হয়ে মিলনপুরস্থ মারমা উন্নয়ন সংসদ মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। হাজার হাজার জুম্ম জনতার উপস্থিতির মাধ্যমে মারমা উন্নয়ন সংসদ হলরুমে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরার সঞ্চালনায়; পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুভাষ কান্তি চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অথিতি হিসেবে অডিও কলে’র মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাবেক রাষ্ট্রদূত (নেপাল), ঢাঃবিঃ সাবেক অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক; প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অংশুমান চাকমা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৩তম বর্ষপূর্তির সমাবেশে বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রমেন মণ্ডল, দিনাজপুর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষ্মীকান্ত রায় সুমন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান যুব ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট পাপ্পু সাহা; বিশেষ অথিতি হিসেবে আরও ছিলেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক বিভূ রঞ্জন চাকমা, যুব বিষয়ক সম্পাদক চিত্র বিকাশ চাকমা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সোহাগ চাকমা প্রমুখ।

সমাবেশে উপস্থিত থেকে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য সুদর্শন চাকমা। সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জগদীশ চাকমা, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জ্ঞান প্রিয় চাকমা, পানছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রত্না তঞ্চঙ্গ্যাঁ, পিসিজেএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি প্রীতি খীসা প্রমুখ। এছাড়াও সংগঠনের বিভিন্ন সহযোগী-অংগ সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও জুম্ম সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

২৩তম বর্ষপূর্তির সমাবেশে প্রধান বক্তা অংশুমান চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির কিছু কিছু ধারা বাস্তবায়িত হলেও অধিকাংশ ধারা আজও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। বিশেষ করে চুক্তির মৌলিক ধারাগুলোকে অবাস্তবায়িত করে রাখা হয়েছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে আজও শান্তি ফিরে আসেনি। এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের কথা থাকলেও সরকারের সদিচ্ছার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। পাহাড়ের মূল সমস্যা ভূমি সমস্যা উল্লেখ করে ভূমি কমিশনের বিধিমালা যথাযথভাবে প্রণয়নপূর্বক অতি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান। চুক্তি মোতাবেক ভারত প্রত্যাগত শরনার্থীসহ আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও প্রত্যাগত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের ২৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার বাস্তবায়নের জন্য কোন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। চুক্তি বাস্তবায়নের নামে ক্ষালক্ষেপন করে শাসকশ্রেণী জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর জুম্ম জনগণ আশা করেছিল তাদের হারানো ভিটেমাটি ফিরে পাবে, কিন্তু না চুক্তি স্বাক্ষরের পরও পর্যটন-উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল করে জুম্মদের তাদের ভিটেমাটি হতে উচ্ছেদ করা করা হচ্ছে। পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহ ও আঞ্চলিক পরিষদের যথাযথ বিধিমালার অভাব ও জেলা পরিষদসমূহে নির্বাচন ব্যাতিরেকে সরকার দলীয় লোকদের মাধ্যমে পরিচালিত করে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। জুম্ম জনগণের একমাত্র মুক্তির সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে বানচালের জন্য পাহাড়ে চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফ, বাঙালী ছাত্র পরিষদ, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ ইত্যাদি ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো আজও চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। অস্ত্রবাজি- চাদাবাজি, খুন-গুমের মত ঘটনা ঘটিয়ে পাহাড়ে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জিইয়ে রেখেছে। তাই পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য চুক্তি মোতাবেক স্থানীয় মিশ্র পুলিশবাহিনী গঠনের বিকল্প নেই বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন। সন্তু লারমা তার অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ জুম্ম জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে সন্তু লারমা আজ জুম্ম জনগণকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে বলেও অভিযোগ করা হয়। পাহাড়ে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা ও চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হলে বৃহত্তর জুম্ম জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নেই। ইউপিডিএফ (প্রসীত) ও সন্তু লারমার দলকে জুম্ম জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি না খেলে বৃহত্তর জুম্ম জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ও আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়।

পরিশেষে বৈচিত্রময় এই পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র রক্ষার জন্য এবং ভিন্ন ভাষাভাষি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে অতি দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকার প্রধান মাননীয় শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানানো হয়। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে শান্তির পরিবর্তে দিন দিন অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, এই চুক্তি বাস্তবায়নে যত কালক্ষেপন করা হবে ততই পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠবে। জুম্ম জনগণের সাথে ২৩ বছর ধরে প্রতারণা করা হচ্ছে, যদি জুম্ম জনগণ এই প্রতারণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি চুক্তির পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যেতে পারে বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন।

Tags: ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবীতে রাজধানীর শাহবাগে র‍্যালি, মানববন্ধন ও সমাবেশ
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিঃ জুম্ম জনগণ আজ প্রতারণা ভাবতে শুরু করেছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu