নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটি ভেনগার্ড
পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের একমাত্র মুক্তির সনদ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি। আগামীকাল ২রা ডিসেম্বর ঐতিহাসিক এই চুক্তির স্বাক্ষরের ২৩ বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। এই চুক্তির মাধ্যমেই জুম্ম জনগণ আশার আলো খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু আজ ২৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুম্ম জনগণ আজ এই চুক্তিকে একটি প্রতারণা হিসেবেই দেখতে শুরু করেছে। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত এই চুক্তি জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার রক্ষাকবচ। যুগ যুগ ধরে অবহেলিত এই পার্বত্য জনপদের মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা উপভোগ করতে চেয়েছিল, কিন্তু সংবিধান রচনার সময়ই এদেশের মূল জনগোষ্ঠী থেকে ভিন্ন জনগোষ্ঠীগুলোর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। যার কারণে পাহাড়ের জুম্ম জনগণ লড়াই-সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল। অধিকার হারা জুম্ম মানুষের অধিকারের প্রশ্নে লড়াই করে জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছেন মহান বীর শহীদেরা। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে আমরা বৃথা যেতে দিতে পারিনা। এই ২৩ বছরেও সরকার চুক্তির কিছু কিছু বিষয় ছাড়া প্রায় ধারাই অবাস্তবায়িত করে রেখে দিয়েছে। জুম্ম জনগণের ভাগ্যকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলে চলেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আজো খেলে যাচ্ছে পাহাড়ের চুক্তি বিরোধী প্রসীত গং। চুক্তি স্বাক্ষরের পর হতে চুক্তি পক্ষীয় লোকদের হত্যা করে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন ও চুক্তিকে বানচালের চেষ্টা অবিরত চালিয়ে এসেছে। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের মিথ্যা বুলি আওড়িয়ে আজ ২২টি বছর অতিক্রান্ত হলেও জুম্ম জনগণের জন্য কিছুই করতে পারেনি। তারা নিজেদের উদ্দেশ্য-লক্ষ্য কি, নিজেদের আশু কর্তব্য কি তাও আজ পর্যন্ত জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারেনি। পেরেছে শুধু খুন,গুম, হত্যা, চাদাবাজি, আর চুক্তির বিরোধীতা করে জুম্ম জনগণের আশা আকাঙ্খাকে ধুলিস্যাৎ করতে। অন্যদিকে চুক্তির স্বাক্ষরকারী একাংশ (সন্তু লারমার দল) চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ফিরে এলেও আজো পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যাপী অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি অনবরত চালিয়ে যাচ্ছে। যা চুক্তির সরাসরি উলঙ্গন। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন পরিচালিত না করে পাহাড়ে একের পর এক হত্যাকান্ড সংঘটিত করে যাচ্ছে সন্তু গং। স্বপক্ষীয় শক্তিকে কাছে টানার মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদার করার প্রতি সন্তু গংরা কেন এত উদাসীন তা সহজেই অনুমেয়। চুক্তি বিরোধী গোষ্ঠী প্রসীত গং এর সাথে আঁতাত করে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনকে স্তম্ভিত করাই হচ্ছে এখন সন্তু গংদের মূল উদ্দেশ্য।
পার্বত্য অঞ্চলে আজ পর্যটনের নামে উচ্ছেদ, ভূমি বেদখল, জুম্মদের উপর অত্যাচার, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও, নারী ধর্ষণ ইত্যাদি প্রকট আকার ধারণ করেছে। যা রাষ্ট্রের সরাসরি চুক্তির উলঙ্গন। চুক্তির মাধ্যমে এখানকার ভূমি সমস্যার সমাধান, ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের যথাযথ পুনর্বাসন, ভারত প্রত্যাগত শান্তিবাহিনীদের যথাযথ পুনর্বাসন, মিশ্র পুলিশবাহিনী গঠন, অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পগুলো প্রত্যাহার, স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে জেলা পরিষদ নির্বাচন, আঞ্চলিক পরিষদ যথাযথভাবে গঠন, সেটেলার বাঙালীদের সম্মানজনকভাবে সমতলে পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয় আজো অবাস্তবায়িত। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম দিনের পর দিন এক অগ্নিকুন্ডে পরিণত হচ্ছে। সরকার যদি আন্তরিক হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী সমাধান বা পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি স্থাপন করতে চাই তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অতি দ্রুত পূর্ণ বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার একমাত্র রাজনৈতিক সমাধান এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বাস্তবায়ন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুম্ম জনগণ চুক্তি স্বাক্ষরকারী সরকারকে প্রতারণাকারি সরকার হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় হতে চার-চার বার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সরকার কেন চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে পারেনি এই প্রশ্ন এখন প্রতিটি জুম্ম জনগণের মুখে মুখে। এদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি জুম্ম জনগণের ক্ষোভ দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। হয়তো এভাবে চলতে থাকলে একদিন আগ্নেয়গিরির মত বিস্ফোরিত হয়ে অশান্ত হয়ে উঠবে পার্বত্য জনপদ। আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী, সরকারের কাছে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবী রেখে আগামীকাল চুক্তির ২৩ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। দলে দলে যোগ দিয়ে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করতে সাহায্য করুন।
খাগড়াছড়িঃ র্যালি, জমায়েত: এমএনলারমা ভাস্কর্য পাদদেশ, মহাজন পাড়া, খাগড়াছড়ি সদর। সময় সকাল ৯ ঘটিকা। সমাবেশঃ মারমা উন্নয়ন সংসদ মিলনায়তন, মিলনপুর, খাগড়াছড়ি সদর।
ঢাকাঃ মানববন্ধন, র্যালি ও সমাবেশ। জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ, ঢাকা। সময়ঃ সকাল ১১ ঘটিকা।