পার্বত্য চট্টগ্রামে “অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস” আজ

পার্বত্য চট্টগ্রামবান্দরবান

সিএইচটি ভ্যানগার্ড

পার্বত্য চট্টগ্রামে “অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস” আজ। ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বান্দরবানের রাজবাড়ী মাঠে বান্দরবান জেলা শাখার বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ছাত্র পরিষদের এই গণতান্ত্রিক সম্মেলনকে বানচাল করতে সরকারী মদতপুষ্ট অনুপ্রবেশকারীদের নেতৃত্বে গঠিত পার্বত্য গণপরিষদ একই সময়ে ঐ স্থানে এক ষড়যন্ত্রমূলক সভা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়। এতে জুম্ম ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় মুসমলান বাঙ্গালীদের এক সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই সম্ভাব্য সংঘর্ষের অছিলায় স্থানীয় প্রশাসন সেদিন রাজবাড়ী মাঠ এলাকায় আবার ১৪৪ ধারা জারী করে যাতে জুম্ম ছাত্রদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে না পারে। কিন্তু এদিন শত শত জুম্ম ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে রাজবাড়ী মাঠে সম্মেলনে মিলিত হয়।

এই সম্মেলন চলাকালে এক পর্যায়ে সরকারী পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মদতে পার্বত্য গণপরিষদের গুণ্ডারা জুম্ম ছাত্র জনতাকে আক্রমণ করে। প্রথম অবস্থায় জুম্ম ছাত্র জনতা এই আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকে। জুম্ম ছাত্র জনতার এই প্রতিরোধ ধ্বংস করতে অবশেষে পুলিশবাহিনী কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ ও গুলি করে জনৈক রণধীর চাকমাকে হত্যা ও শতাধিককে আহত করে। এছাড়া রিক্তন চাকমা (খাগড়াছড়ি) সহ ২২ জন ছাত্রকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

পার্বত্য গণপরিষদের গুণ্ডাদের প্রবল হামলা ও পুলিশের গুলিবর্ষণের ফলে জুম্ম ছাত্র জনতা জুম্ম অধ্যুষিত মধ্যম পাড়া, উজানি পাড়া ও রাজবাড়ী এলাকায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই সময়ে মুসলমান বাঙ্গালীরা জুম্ম ছাত্র জনতাকে ধাওয়া করে এইসব এলাকায় ঢুকে লুটতরাজ ও ঘরবাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে দুইশতাধিক ঘরবাড়ী পুড়ে যায়।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ এই দিনটিকে “অশুভ শক্তি প্রতিরোধ দিবস” হিসেবে পালন করে আসছে।

পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের এই গণতান্ত্রিক সম্মেলনে পুলিশ ও অনুপ্রবেশকারী মুসলিম গুণ্ডাদের এই হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে ১৫ই মার্চে চট্টগ্রামে জুম্ম ছাত্রদের এক প্রতিবাদ মিছিল ও সভা অনুষ্টিত হয়। এছাড়া এই ঘটনার প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্ররা খাগড়াছড়িতেও প্রতিবাদ মিছিল করে।

১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ দেশের ৪৫ জন বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবি এক যুক্ত বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, বান্দরবানে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পরোক্ষ সহযোগিতায় একদল দুর্বৃত্ত পাহাড়ী ছাত্র-জনতার উপর হামলা চালিয়ে বহু জনকে আহত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই জাতীয় ঘটনায় দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক সমস্যা জিইয়ে রাখা হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কবি বেগম শুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রহমান, বিচারপতি কে এম সোবহান, ডঃ কামাল হোসেন, ডঃ আহম্মদ শরীফ, ডা হুমায়ুন আজাদ, শুধাংশ শেখর হালদার প্রমুখ। একই তারিখে আরো ১৫টি ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অনুরূপ এক বিবৃতিতে এ-ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের শাস্তির দাবী জানান।

এছাড়া মানবাধিকার কর্মী আইনজীবি ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে ১২১ জন সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত দল বন্দরবান সফর করে ১৯৯৫ সালের ১৮ই মার্চ ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এ সম্মেলন তদন্তকারী দলটি এই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ ও প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানান।

Tags: , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র: তুলসী গ্যাবার্ড
সারাদেশে অব্যাহত নারী নির্যাতন, নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে পিসিপি ও এইচডব্লিউএফ- এর মশাল মিছিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu