পানছড়িতে মহান নেতা এম.এন. লারমা’র ৮৩ তম জন্মদিবসে আলোচনা সভা

খাগড়াছড়ি

সিএইচটি ভ্যানগার্ড, পানছড়ি

প্রিয় নেতা তোমায় ভুলি নাই, ভুলব না “এম.এন. লারমার বিপ্লবী চেতনা জাগরিত হোক গণমানুষের মননে”

মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৮৩তম জন্মদিবস- ২০২২ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ, পানছড়ি থানা শাখা উদ্যোগে নানা কর্মসূচিসহ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আজ (১৫ সেপ্টেম্বর-২০২২) সকাল ১০.০০ ঘটিকায় সময় খাগড়াছড়ির পানছড়িতে উপজেলা সদরস্থ মানিক্যা পাড়ায় পিসিজেএসএস পানাছড়ি থানা শাখার যুব বিষয়ক সম্পাদক শ্রী রবিন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও পিসিপি পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি সুনয় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মহান নেতার ৮৩ তম জন্ম দিবসে এম এন লারমা সহ সকল জুম্ম বীর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভা শুভ সুচনা করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সদস্য শ্রীমতি রত্না তঞ্চঙ্গ্যাঁ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিসিজেএসএস কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শ্রী প্রশান্ত চাকমা; পানছড়ি সুশীল সমাজের বিশিষ্ট মুরুব্বি ও পানছড়ি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রী প্রনেন্দ্র চাকমা; কার্বারী ও ত্রিপুরা কল্যাণ ফোরাম পানছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি শ্রী বাদশা কুমার ত্রিপুরা; পিসিজেএসএস পানছড়ি উপজেলা শাখার সমন্বয়ক শ্রী সুজন চাকমা; সাবেক মেম্বার ও বিশিষ্ট মুরুব্বি শ্রী সাককেন্ডু চাকস্মা; পানছড়ি সুশীল সমাজের বিশিষ্ট মুরুব্বি শ্রী রসিক মোহন চাকমা প্রমূখ। এছাড়াও পিসিপি, যুব সমিতি, মহিলা সমিতি ও পানছড়ি উপজেলার জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন গ্রামের কার্বারী, সুশীল সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পিসিপি পানছড়ি থানা শাখা সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী রিমেশ চাকমা। মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার আত্মজীবনী স্মৃতি চারণ পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি পানছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রী জুম মান চাকমা। এম এন লারমা’র ৮৩ তম জন্ম দিবসে আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সূতকর্মা পাড়া গ্রামের যুব সমাজের সভাপতি শ্রী রিপন চাকমা; ৫ নং উল্টাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার শ্রী তাপস চাকমা। সাবেক মেম্বার ও বিশিষ্ট মুরুব্বি সাককেন্ডু চাকমা,বাদশা কুমার ত্রিপুরা, প্রনেন্দ্র চাকমা, প্রশান্ত চাকমা প্রমুখ ব্যক্তি।

বিশেষ অতিথি শ্রী বাদশা কুমার ত্রিপুরা বলেন- মহান নেতা এম এন লারমার আত্মজীবনী স্মৃতি চারণ করেন এবং এম এন লারমার আদর্শে উজ্জীবীত হয়েই জুম্ম জাতির জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে ছাত্র, যুব সমাজের ইস্পাত ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বিশেষ অতিথি শ্রী প্রনেন্দ্র চাকমা বলেন: এম এন লারমা জুম্ম জাতির জাতীয় উন্মেষ সাধন করেছিলেন, যিনি জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণের লক্ষ্যে কঠোর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জুম্ম জনগণের মহান পার্টি জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়েছিল যারা পতাকাতলে ১০টি ভিন্ন ভাষাভাষী জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহান আত্মনিয়ন্ত্রাণাধিকার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি আরও বলেন ১৯৭০ সালের পূর্ব পাকিস্তান আমলের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন ও বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে তিনি ব্যক্তি এম এন লারমার নির্বাচনী আলোচনায় ও প্রচারে পানছড়ি ও খাগড়াছড়িতে উপস্থিত ছিলেন। এম এন লারমার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতায় জুম্ম জাতি ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েও আজ অবধি টিকে রয়েছে, সেই মহান চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ এম এন লারমার অকাল মৃত্যুতে সমস্ত পার্টি, শান্তিবাহীনি তথা জুম্ম জনগণের মুক্তি সংরামে নেতৃত্বের যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হবার নয়। তাঁর প্রদর্শিত পথ ও নির্দেশিত নীতিকৌশল আত্মনিয়ন্ত্রাণাধিকার আদায়ের সংগ্রামে একমাত্র দিশারী হয়ে থাকে। মহান নেতার আত্মত্যাগ তিতিক্ষা যুগে যুগে দেশের প্রতিটি মুক্তিকামীর এক জ্বলন্ত অনুপ্রেরণার উৎসস্থল।

প্রধান অতিথি শ্রীমতি রত্না তঞ্চঙ্গা বলেন- বর্তমান গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এম এন লারমার কর্ম, সাধনা, চিন্তার যথার্থ মূল্যায়ন হওয়া দরকার। নিপীড়িত জুম্ম জনগণ এবং ব্যাক্তি এম এন লারমার লড়াইকে একই সূতায় গাঁথা দরকার। এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি উত্তর প্রজন্মের জুম্ম জনগণের লড়াইকে এগিয়ে নিতে সঠিকভাবে এম এন লারমাকে উপস্থাপনও এই সময়ের দাবি। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় যে, প্রত্যেক প্রজন্মকে সামনে এগোনোর জন্য তার পূর্ববর্তী প্রজন্মের কর্ম, চিন্তা, দর্শনকে ক্রিটিক্যালি বিচার করতে হয় এবং সঠিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমাণিত ভুল ঝেড়ে ফেলে যা নতুন প্রজন্মের জন্য সঠিক, সময়োপযোগী তা গ্রহণ করতে হয়।

আলোচনা সভায় এম এন লারমার ৮৩ তম জন্ম দিবসের কেক কাটেন আলোচনা সভার সভাপতি, প্রধান অতিথি ও মঞ্চে উপবিষ্ট অতিথিবৃন্দ গণ। আলোচনা সভায় পানছড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগতদের মাঝে এম এন লারমার ৮৩ তম জন্ম দিবসের কেক বিতরণ, পানীয় ও নাস্তা পরিবেশন মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভায় শ্রী রবিন ত্রিপুরার সভাপতি বক্তব্য বলেন এই মহান নেতা বিপ্লবীর আশা, স্বপ্ন, সাধনা,কর্ম, আমাদের পথ দেখায় নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে। এবং মহান নেতার আশার বাণী শুনে বলি, জয় আমাদের হবেই হবে। নিপীড়িত জনগণের জয় হবেই হবে। এম এন লারমাও নিপীড়িত মানুষের ভাগ্যকাশে মুক্তির ধ্রুবতারা হয়ে থাকবেন। শেষান্তে সভাপতি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের আন্দোলনে জুম্ম জনগণকে সামীল হওয়ার আহবান জানান সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি শতভাগ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান এবং স্মরণ সভা সমাপ্তি ঘোষণা করেন। আদিবাসী বিদ্বেষীরা একদিন পরাজিত হবে। নতুন সূর্যদোয়ের অপেক্ষায়, আসো সবাই মিলে আলোর মশাল জ্বালি। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে এবং সেই শান্তি অনন্তকাল ধরে বিরাজমান থাকবে।

Tags: , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

সাফজয়ী বাংলাদেশ ও আদিবাসী নারীদের অংশগ্রহণ
খাগড়াছড়িতে এম.এন. লারমা’র ৮৩তম জন্ম দিবসে আলোচনা সভা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu