সিএইচটি ভ্যানগার্ড, পানছড়ি
পানছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে শহীদ সুদীর্ঘ চাকমাসহ তিন সহযোদ্ধার ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। আজ (১২ মার্চ ২০২৩) সকাল ১০ ঘটিকার সময় অস্থায়ী শহীদ ভেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দরা।
পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। স্মরণসভায় পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ পানছড়ি থানা শাখা’র সাধারণ সম্পাদক শ্রী রিমেশ চাকমা চাকমার সঞ্চালনায় ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ পানছড়ি থানা শাখা’র সভাপতি শ্রী সুনয় চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির বিচার বিভাগীয় কমিটির অন্যতম সদস্য শ্রী প্রশান্ত চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি পানছড়ি থানা শাখার সুযোগ্য ও সংগ্রামী সভাপতি শ্রী বিমুলেন্দু চাকমা, সাধারণ সম্পাদক শ্রী রণজীবন চাকমা প্রমূখ। এছাড়াও স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি পানছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও উদীয়মান যুব নেতা শ্রী-জুমান চাকমা।
স্মরণসভার শুরুতে শহীদের সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ পানছড়ি থানা শাখার সদস্য শ্রী পরাগ চাকমা ।
বক্তরা বলেন, যারা সুদীর্ঘ চাকমাসহ প্রগতিশীল ছাত্র নেতাদের হত্যা করা হয়েছে সেই বিভেদপন্থীরা জাতির জন্য তারা কখনো মঙ্গল চায় না। চাই শুধু শিক্ষিত নেতৃত্বকারীদের হত্যা করা। রাজনীতিকে মেধাহীন করা এবং সংঘাত জিইয়ে রেখে নিজের স্বার্থকে আদায় করা। ধিক্কার জানাই সেই নেতাদের, সেই বিভেদপন্থীদের। যারা মানুষকে নিয়ে রক্তে হোলিখেলা খেলে। আর কতো মানুষের প্রাণ নাশ করবে এই রাজনীতি? হত্যার চিন্তা চেতনা থেকে তাঁদের বেড়িয়ে আসতে হবে। তা নাহলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। তখন আজীবন জুম্ম জনগণের কাছে হত্যাকারী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত হতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রী প্রশান্ত চাকমা বলেন, সেই ১৯৭২ সালের পার্টি গঠনের স্মৃতিকথা, শান্তিবাহিনী আমলে যুদ্ধের দামামা, নেতা -এম এন লারমা আর্দশের কথা। তিনি বলেন সন্তু লারমাকে আমার স্ব চোখে দেখা আসলে তিনি প্রকৃত অর্থে একজন দ্বিচারিতা নেতা, একজন প্রকৃত নেতা কখনো এরকম হতে পারেনা। তার একঘেয়েমি আচরণে লাম্বা -বাদি বিভাজন, সেই বিভাজনে হারিয়েছি আমাদের জুম্মজাতির পিতা মহান নেতা এম এন লারমাকে। এম-এন লারমার স্মৃতি তুলে ধরেন তিনি, এমন এক নেতাকর্মীদের সুখ দুঃখ নিয়ে সবসময় কথার্বাতা এবং আলাপ আলোচনা করতেন। এই নেতাকে হারিয়ে আমরা আজ পুরো অসহায়, জাতি অসহায়। যাহাতে ভবিষ্যতে জাতির পিতা মহান নেতা লারমাসহ জানা অজানা ছাত্র নেতা সুদীর্ঘ চাকমার মতো মেধাবী মানুষ আমাদের হারাতে না হয়। সংঘাত বন্ধ করে জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষণ করা দরকার, চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন আন্দোলন জোরালো করা দরকার। না হলে জাতির অবশ্যই বিলুপ্ত পথে।
পরিশেষে সুনয় চাকমা বলেন, একদিন এই খুনিদের পার্বত্যবাসী বিচার করবে। খুনিদের ক্ষমা নেই, জেনেশুনে জাতিকে ও প্রগতিশীল নেতাদের বিলুপ্ত করতে চাচ্ছে। এটা চরম অন্যায়, জাতির জন্য অনেকটা ক্ষতি বলে আমি মনে করি। এতে তার সভাপতিত্বে মাধ্যমে স্মরণসভাটি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এরপর সন্ধ্যায় শহীদদের স্মরণে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দরা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন।
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ১২ই মার্চ রাঙ্গামাটি জেলার লংগদুতে সাংগঠনিক সফরে গিয়ে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি’র সশস্ত্র ক্যাডারদের ব্রাশফায়ারে দজর পাড়া এলাকায় নির্মমভাবে শহীদ হন সুদীর্ঘ চাকমাসহ তার তিন সহযোগী।