
সাজেকের মেঘ এখন খুব কাঙ্ক্ষিত বস্তু।
প্রতিদিন শয়ে শয়ে পর্যটক এই মেঘ দেখতে যান। তাদের থাকার জন্য প্রতিদিন গড়ে উঠছে নতুন নতুন রিসোর্ট। পাহাড়ে অবাধে চলছে জমি দখল।
আজ থেকে ২০ বছর আগে বান্দরবান থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরের বগা লেকে কোনো প্লাস্টিক ছিলো না। আজ সেখানে চায়ের দোকান,প্লাস্টিক,চিপসের প্যাকেটের স্তুপ,শোনা যাচ্ছে নতুন হোটেল উঠবে। সাজেকের মতো এখানেও কয়দিন পর আর দম ফেলানোর জো থাকবে না। আগে বগা লেকে এখানকার পাহাড়ী আদিবাসী মেয়েরা স্নান করতো। পর্যটকদের উৎপাতে সেটা বন্ধ হয়েছে বহু আগেই। পাহাড়ী আদিবাসীরা আজ পর্যটকদের কাছে সাফারী পার্কে ছেড়ে দেয়া জন্তুর মতো। পর্যটকেরা নাকি পাহাড়ী মেয়ে দেখতে আসে।
অথচ
বংশ পরম্পরায় ভূমির মালিকানা আন্তর্জাতিভাবে স্বীকৃত৷ আদিবাসীদের সামাজিক মালিকানা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত৷ আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য শান্তি চুক্তিতেও এর স্বীকৃতি রয়েছে৷ কিন্তু মানা হচ্ছে না৷”
ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এক কাঠা জমি কিনতে পারবেন না৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট চাইলেও নিউ মেক্সিকো বা সিয়াটলে জমি কিনতে পারবেন না৷
এটা আইন৷”
আর বাংলাদেশে?
পাহাড়ের উন্নয়নের নামে এর আগে নীলগিরিতে ৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যেখান থেকে উচ্ছেদ হয়েছে ২০০ ম্রো ও মারমা পরিবার।
থানছির জীবননগর সেপ্রু পাড়া ৬০০ একর অধিগ্রহণের ফলে উচ্ছেদ হয়েছে ১২৯ ম্রো পরিবার।
সাজেক রুইলুই পাড়ায় ৫ একর অধিগ্রহণের ফলে উচ্ছেদ ৬৫ টি ত্রিপুরা পরিবার।
এছাড়াও ক্রাউডং (ডিমপাহাড়) ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণের ফলে উচ্ছেদ হয়েছে ২০২ ম্রো পরিবার।
নীলাচলের ২০ একর থেকে উচ্ছেদ হয়েছে ১০০ ত্রিপুরা,তঞ্চঙ্গ্যা, মারমা পরিবার।
সর্বশেষ আলুটিলার প্রায় ৭০০ একরের জমি থেকে উচ্ছেদহতে পারে ২,৫৯০ জন ত্রিপুরা আদিবাসী।
প্রতিদিন একরের পর একর বনভূমি উজাড় করে অনেকেই ফুলে ফেঁপে ঢোল হচ্ছেন। একদিকে উজাড় হচ্ছে জনপদ,আরেক দিকে বনভূমি। দুদিন পরে পাহাড়ে ভূমিধস নামবে,আমরা পাহাড়ও হারাতে শুরু করবো।
আমাদের আর কত হারাতে হবে?একদিকে সুন্দরবনকে হারাতে যাচ্ছি,খাগড়াছড়ি,বান্দরবানকে হারাতে যাচ্ছি। আর এদিকে হারাচ্ছি পাহাড়ী ঐতিহ্য,পাহাড়ের আসল মানুষদের আর দিনশেষে নিজেদের।
***প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।