খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
আজ ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর । দিবসটিকে কেন্দ্র করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে সকাল ১০:৩০ ঘটিকায় খাগড়াছড়ি সদরস্থ কমলছড়ি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশ থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই দাবী জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রী বিমল কান্তি চাকমা ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ইস্পাত কঠিন আন্দোলন গড়ে তুলুন এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত গণসমাবেশে সংগঠনটির খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রত্যয় চাকমা জুকির সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন ২রা ডিসেম্বর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আরাধ্য পাল খীসা, সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অংশুমান চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা, শরণার্থী কল্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা (বকুল), উপজাতীয় ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রবি শংকর তালুকদার, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমর বিকাশ চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য জেএসএস রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জ্ঞানজীব চাকমা বলেন, যে সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেই আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন, কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই দীর্ঘ সময়ে চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর কোন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তিনি অবিলম্বে চুক্তি বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানান অন্যথায় অন্য কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তার দায় নিশ্চিতভাবেই সরকারের উপর বর্তাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমা তার বক্তব্যে বলেন- ছাত্র সমাজের একজন প্রতিনিধি হয়ে নারী-অর্থ-ক্ষমতালোভী কোন ব্যক্তিকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সর্থন দেওয়া যায় না। তিনি তার বক্তব্যে জনগণের ভোটের মাধ্যমে না হয়ে ফ্যাক্সে সিলেক্টেড সরকারদলীয় লোকদের মাধ্যমে পরিচালিত জেলা পরিষদের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বলেন এটি রাষ্ট্রের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি অবিলম্বে চুক্তি মোতাবেক স্থায়ী বাসিন্দানের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে জেলা পরিষদ এবং আঞ্চলিক পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবী জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সভাপতি সন্তোষিত চাকমা (বকুল) বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে ওআইসিসহ মুসলিম বিশ্বের তথা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমাধানের নানাবিধ চেষ্টা পরিলক্ষিত হয় কিন্তু রাষ্ট্রীয় মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামে এতগুলো গণহত্যা সংগঠিত হলো সরকারের এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। চুক্তি মোতাবেক আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পূণর্বাসনের কথা থাকলেও নামে টাস্কফোর্স গঠিত হলেও কার্যত দুর্নীতিবাজ, নারী-ক্ষমতালোভীদের সেখানে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় আসীন করা হয়েছে৷ তিনি তার বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে অধিকতর চরিত্রবান, বিবেকবান লোককে বেছে নেওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান৷
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, ৯৭ সালে জন্ম নেওয়া শিশুটির বয়স আজ ২৬, সে ভালো নেই, আমরাও ভালো নেই৷ তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের দুর্দশা বুঝা যায় না যেকারণে এসকল মন্ত্রীরা বাস্তবতা না জেনে মনগড়া তথ্য বলে বেড়ান। তিনি আগামীদিনে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবী জানান৷
অংশুমান চাকমা তাঁর বক্তব্যে বলেন, কালো মেঘের ঘনঘটা চলছে, সতর্ক এবং হুশিয়ার থেকে শুধুমাত্র মায়াকান্না না করে আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্ববান জানিয়ে তিনি বলেন – “আমরা প্রত্যাগত শান্তিবাহিনীর সদস্য, জীবন গেলে যাক, মানুষের মত মানুষ হিসেবে বেচে থাকার অধিকার চাই”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিমল কান্তি চাকমা আরও বলেন – রক্তপিচ্ছিল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চুক্তি অর্জন করেছি৷ অতীতের সকল গ্লানি মুছে আমরা শান্তিতে থাকতে পারবো মনে করেছিলাম চুক্তি পরবর্তীতে। কিন্তু চুক্তির এত বছরেও মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন না হওয়া জুম্মজনগণের সাথে প্রতারণার সামিল। তিনি বলেন, পার্বত্যবাসী অধিকার আদায়ের জন্য আবার রক্ত ঝড়ুক সেটা চাইনা কিন্তু রাষ্ট্র যদি কর্ণপাত না করে প্রয়োজনে আবারও প্রস্তুত রয়েছে জুম্মজনগণ।
সমাবেশ শুরুর আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে পার্বত্য বৌদ্ধ মিশন প্রাঙ্গণ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবীতে র্যালীর আয়োজন করা হয়।