ভ্যানগার্ড প্রতিনিধি
আন্তর্জাতিক নারী দিবস- ২০২৪ উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে র্যালি ও সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি। “Invest in women: Accelerate progress”- নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ– এই স্লোগানে র্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সকাল ৯ঃ৩০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি শহরের মধুপুরস্থ সংগঠনের জেলা কার্যালয় থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে র্যালিটি খাগড়াপুরে শেষ হয় এবং সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি রত্না তঞ্চঙ্গ্যাঁর সঞ্চালনায় ও মহিলা সমিতির সংগ্রামী সভাপতি শ্রীমতি কাকলী খীসার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা।
সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রীমতি মল্লিকা চাকমা। সমাবেশে মহিলা সমিতির বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিনিধি বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। এছাড়াও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পিসিপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনেন্টু চাকমা; যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জগদীশ চাকমা; খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রীতি খীসা প্রমূখ।
বক্তারা কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতার লাইন- “পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর” উচ্চারণ করে বলেন মানব সভাতার সূচনালগ্ন হতে অদ্যাবধি মানব সভ্যতা যতটুকু উন্নত হয়েছে তার সম অবদান নারী সমাজের। সুতরাং নারীদের সামাজিকভাবে-রাষ্ট্রীয়ভাবে এগিয়ে যাবার সুযোগ করে দিতে হবে। নারীদের হীন ভেবে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। আজকে মহাকাশ অভিযান হতে শুরু করে সমুদ্রাভিযান তথা সর্বক্ষেত্রেই নারীরা অবদান রেখে চলেছে। নারীরা শুধু ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকলে হবেনা, সারাজীবন রান্নার ঘরে কাটালে হবেনা। রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সমাজের-রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়-দায়িত্ব কাঁধে নিতে হবে।
নেপোলিয়নের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তারা বলেন, “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব”- নারীরা মানুষ গড়ার কারিগড়। একজন মা ছোটকাল হতে তার সন্তানদের যে শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলেন সেভাবে সে বড় হবে। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের জাতীয় জীবনে যে দুর্যোগ নেমে এসেছে তার থেকে মুক্তি পাবার জন্য যার যার সন্তানদের সঠিক ও বাস্তবমুখী শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলতে হবে। জুম্ম জনগণের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে আজকে নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সীমিত তাই জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজন। পৃথিবীব্যাপী নারীরা মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে জুম্ম জনগণের আন্দোলনের সূচনালগ্ন হতে জুম্ম নারীরাও কম অবদান রাখেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে কত নারী ধর্ষিত হয়েছে, কত নারী রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটেলার বাঙালিদের কর্তৃক নির্যাতন-হত্যার স্বীকার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারীদের অনুপ্রেরণার একটি নাম হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদিকা কল্পনা চাকমা। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই ও জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লড়াই তিনি চালিয়েছেন তার সেই প্রতিবাদী কন্ঠস্বর এদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের ভিত নড়ে গিয়েছিল। তার সেই প্রতিবাদের ভাষা তারা সহ্য করতে পারেনি তাইতো কল্পনা চাকমাকে রাতের আঁধারে চুপি চুপি অপহরণ করে হত্যা করেছে। আজকে আমাদের জুম্ম নারী সমাজকে সেই কল্পনা চাকমাকে আইডল হিসেবে নিয়ে আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে নিজেদের সঁপে দিতে হবে। প্রীতিলতারা যেভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে বন্দুক কাঁধে নিয়ে বন-জঙ্গল ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রয়োজনে আগামী দিনে সেইভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে বলেও বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। সম্প্রতি রাঙ্গুনিয়ায় চম্পা চাকমা নামে এক আদিবাসী নারীকে যে হত্যা করা হয়েছে দোষীকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার দাবী জানানো হয়।
অন্যদিকে র্যালিতে প্লেকার্ডে নারীদের উপর সহিংসতা বন্ধ, ধর্ষণ, সামজিক নিপীড়ন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবী জানানো হয়। সবশেষে আজকের সমাবেশের সভাপতি শ্রীমতি কাকলী খীসার বক্তব্যের মধ্যে নারী দিবসের সমাবেশ সমাপ্ত হয়।