দুর্গারূপে আবির্ভূত পরিযায়ী শ্রমজীবী-মা

আন্তর্জাতিক

ভ্যানগার্ড ডেস্ক

সন্তান কোলে হেঁটে চলেছেন মা। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার, লক্ষ্য বাড়ি ফেরা। পেটের খিদে, শারীরিক কষ্ট যতই হোক না কেন, তার আঁচ যেন কোলের সন্তানের গায়ে না লাগে। কয়েক মাস আগে করোনা লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর পরই ভারতে পরিযায়ী শ্রমিকদের এভাবে বাড়ি ফেরার দৃশ্য দেশটির সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। লকডাউন উঠে গেছে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে জনজীবন। করোনার বিপদ না কাটলেও উৎসবের মৌসুম হাজির। কিন্তু কেমন আছেন সন্তান কোলে বাড়ি ফিরে আসা সেই পরিযায়ী শ্রমজীবী মায়েরা?

কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ’র এক প্রতিবেদন মতে, ভারত সরকার করোনা মহামারিতে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলেও অভিনব উপায়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্মান জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রখ্যাত বেহালার বড়িশা ক্লাবের পূজামণ্ডপে এবার দুর্গারূপে দেখা যাবে সন্তান কোলে এক মাকে। আদতে যাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একজন পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে। শুধু দুর্গা নয়, তার সঙ্গে থাকা লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী—প্রতিটি মূর্তিই একই আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে।

বড়িশা ক্লাবের এবারের দুর্গা প্রতিমা এমনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে যাতে থাকবে বিবর্ণ শাড়ি পরা এক মা, তার কোলে খালি গায়ের এক ছেলে। মায়ের পেছনে তার দুই মেয়ে। চতুর্থ সন্তানকেও দেখা যাবে প্রতিমাতে। চার সন্তানসহ মা হাঁটছেন ত্রাণের খোঁজে। সন্তানদের জন্য ত্রাণ খুঁজছেন এই মা। হঠাৎ কেউ ডাকার ফলে পেছনে তাকাচ্ছেন। আহ্বানকারী বুঝতে পারেন ওই অভিবাসী মা-ই হলেন দেবি এবং তার পূজা করেন।

বড়িশা ক্লাবের এবারের পূজার প্রতিপাদ্য ‘ত্রাণ’। পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের একজন মা তার সন্তানদের নিয়ে ত্রাণের খোঁজ করছেন, সেই ভাবনাই এবার ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছে বড়িশা ক্লাব। শিল্পী রিন্টু দাস দ্য টেলিগ্রাফকে জানান, তাদের মণ্ডপে থাকা মা দুর্গার মূর্তি আসলে সেই মায়েরই রূপ, যিনি সূর্যের তেজ, খিদে এবং যাবতীয় কষ্টকে জয় করেই তার সন্তানদের জন্য খাবার, পানি ও ত্রাণ খোঁজার চেষ্টার করছেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সেপ্টেম্বরে জানায়, দেশটির প্রায় চার কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্য ২৫ শতাংশ বা ১ কোটি ৫ লাখ করোনা মহামারি ও লকডাউনের কারণে তাদের নিজ নিজ রাজ্যে ফিরে গেছেন। সবথেকে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন উত্তর প্রদেশে (৩২ লাখ ৫০ হাজার)। এর পরেই রয়েছে বিহার (১৫ লাখ।)।

আকস্মিক লকডাউন ঘোষণার ফলে লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক তাদের কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন। অপরিকল্পিত লকডাউন, পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতার অনুপস্থিতি ও পরিবহন না থাকার ফলে দেশভাগের পর এমন মানবেতর পরিস্থিতি ভারতে দেখা যায়নি।

এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েন নারী পরিযায়ী শ্রমিকরাই। একদিকে যেমন কাজ হারিয়ে চার দেয়ালের মধ্যে সম্পূর্ণ আবদ্ধ হয়ে গিয়েছেন তারা, পাশাপাশি অনেকেই পারিবারক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে আসা তথ্যতেও দাবি করা হয়েছে, লকডাউনের সময়ে পারিবারিক সহিংসতা বেড়েছে।

প্রতিমা শিল্পী বলেন, লকডাউনের সময় আমার মনে পড়ে টিভি ও সংবাদপত্রে দেখেছি অভিবাসী শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন, পথেই মারা গেছেন অনেকে। বিভিন্ন রাজ্য থেকে আমার বন্ধুরা রাস্তার ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন। নারীরা সন্তান কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন- এটি আমার কাছে অদম্য চেতনা বলে মনে হয়েছে। আমার মনে তারা দেবী হিসেবে স্থান পেয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা। এই উৎসব মেয়ের বাড়ি ফেরা এবং নারীত্ব ও মাতৃত্বের উদযাপন। রিন্টু দাশের প্রতিমায় এই সবগুলোই প্রতীকীরূপে উঠে এসেছে। বড়িশা ক্লাবের এবারের প্রতিমায় কোনও অস্ত্র থাকবে না, নেই কোনও অসুর। এক হাতে সন্তান কার্তিক, অন্য হাতে খালি একটি ব্যাগ। মায়ের মুখ মায়াভরা, তার চোখ কষ্টে ম্লান কিন্তু সতর্ক। আয়োজকদের মতে, এখানে রাক্ষস হলো ক্ষুধা।

তথ্যসূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

Tags: , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা ফেরাতে নতুন জোট
পিসিপির দীঘিনালা থানা শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu