খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
চৈত্র সংক্রান্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের প্রধান সামাজিক উৎসব (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু-বিষু-বিহু-চাংক্রান) ‘র দিনের এসএসসি পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন ও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫দিনের সরকারি ছুটির দাবীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)। আজ ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি প্রেসক্লারের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে এই দাবী জানানো হয়।

পিসিপির কলেজ কমিটির সভাপতি ধনঞ্জয় ত্রিপুরার সঞ্চালনায় এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মায়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে মানবন্ধন পরবর্তী সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনতোষ ত্রিপুরা, কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক পিন্টু চাকমা, এসএসসি ২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি অনিন্দা চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রুটিনে ১৩ ও ১৫ এপ্রিল ২০২৫ এ পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এর মাঝে ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে একদিন সরকারি ছুটি দেওয়া হলেও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার রুটিন প্রণয়নের সময় ছুটি হিসেবে বাংলা নববর্ষকে বিবেচনা করা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের প্রধান সামাজিক উৎসব বিঝু, বিষু, বৈসু, বিহু, সাংগ্রাই, চাংক্রান উৎসবাদি ছুটির আওতায় আনা হয়নি।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটলেও প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার রুটিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের সামাজিক উৎসবের দিনে পরীক্ষা রাখা বিগত সময়ের মত বৈষম্যেরই বহিঃপ্রকাশ। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের সাথে বৈষম্য দূরীকরণে এই রুটিন (এসএসসি ২০২৫) পরিবর্তন করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণার দাবী জানানো হয় সমাবেশ থেকে।

মানববন্ধন ও সমাবেশ শেষে পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি সুজন চাকমার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একই দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম জাতিসমূহের প্রধান সামাজিক উৎসবটির উদ্দেশ্য ও চেতনা এক ও অভিন্ন। বর্ষবিদায় ও বরণসহ এ উৎসবের দিনে পরিবারের লোকজন সবাই একত্রিত হয়ে থাকে এবং সামাজিকভাবে একত্রিত হয়ে পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে নানাবিধ ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এছাড়া বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের মাঝে এ উৎসবের ঐতিহ্যগত ও আর্থসামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। স্মরণাতীত কাল থেকে উদযাপিত হয়ে আসা এই উৎসবটি জুম্ম জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার অংশ যা তাদের পারস্পরিক ঐক্যতান ও ভ্রাতৃত্ববোধকে একইসূত্রে গেঁথে আবহমানকাল ধরে বহমান রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল (বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে) পর্যন্ত এ উৎসবাদি পালিত হয়ে থাকে।
এই উৎসব পালনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কতৃর্ক ১২ ও ১৫ এপ্রিল সরকারি ছুটির ঘোষণা থাকলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সুনির্দিষ্ট কোন ছুটির নির্দেশনা না থাকায় অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বাৎসরিক একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ছুটির তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়না।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা যেন উৎসবমুখর পরিবেশে নিজেদের প্রধান সামাজিক উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর নিমোক্ত দাবিসমূহ জানানো হয়-
১. অনতিবিলম্বে ১৩ এপ্রিল ও ১৫ এপ্রিল পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনপূর্বক এসএসসি পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রকাশ করা।
২. সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৫ (পাঁচ) দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।