বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় আটক রিং রং ম্রো’র মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকাস্থ আদিবাসী ছাত্র-যুব সংগঠনসমূহের ব্যানারে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রতিবাদ সমাবেশে হ্লামং চিং মারমার সঞ্চালনায় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনতোষ চাকমার সভাপতিত্বে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রেং ইয়ং ম্রো, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন, পিসিপি’র ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শৈসানু মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা, ম্রো স্টুডেন্টস কাউন্সিলের প্রতিনিধি পায়া ম্রো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী কুর্নিকোভা চাকমা ও সুর্মি চাকমা প্রমুখ।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বহু বছর ধরে রাষ্ট্র কখনও নিজে, কখনও বা তার মদদপুষ্টদের দিয়ে আদিবাসীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রান্তিকতার খাদে ঠেলে দিচ্ছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ভূমিরক্ষা কমিটির নেতা রিংরং ম্রোকে মিথ্যা মামলায় আটক করা। রিংরং ম্রোকে গ্রেপ্তার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের উপর চলমান নিপীড়নের বহিঃপ্রকাশ।
বক্তারা অভিযোগ করেন, রিংরং ম্রোকে গ্রেপ্তারের ওয়ারেন্ট না দেখিয়ে সিভিল ড্রেসে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । অথচ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, “সিভিল ড্রেসে কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।
বক্তারা আরও বলেন, ২০২২ সালে লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর আমরা শিশুদের জন্য পাঠশালা স্থাপন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে সেই এলাকায় যেতে দেওয়া হয়নি। বরঞ্চ পুলিশ বলেছে, আমরা নাকি অবৈধ জায়গায় স্কুল স্থাপনের চেষ্টা করতেছি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল কি শুধুমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিরাই পাবে? আদিবাসীরা কি সেই ফসল থেকে আজীবন বঞ্চিত থাকবে? তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সংস্কার কমিশনগুলোতে ডজন ডজন কাগজ খরচ করে প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে, অথচ সেখানে আমার ম্রো ভাইদের কথা নেই, সেখানে আদিবাসীদের কথা নেই।
উল্লেখ্য, গতকাল সন্ধ্যায় আনুমানিক ৬:১৫ মিনিটে নিজের কর্মস্থল কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে মিটিং শেষ করে ফেরার পথে সিভিল ড্রেসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাম্বা খোলা নামক স্থান থেকে অবৈধভাবে উঠিয়ে নিয়ে যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আজ কোর্টে আনার কথা থাকলেও আনা হয়নি।
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে ১৯৯৬ সালে বান্দরবান জেলা প্রশাসন কর্তৃক রাবার চাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়। লিজ নেওয়ার পর থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখল, ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীকে হুমকি ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০২২ সালে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে স্থানীয় আদিবাসীদের একমাত্র পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ ওঠে।