ঢাকায় আদিবাসী ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের

আদিবাসীদেশ

সিএইচটি ভ্যানগার্ড

গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫খ্রি. ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র শান্তিপূর্ণ এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচীর উপর ‘ষ্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামক উগ্র জাতীয়তাবাদী ও উগ্র সাম্প্রাদায়িক গোষ্ঠীর নৃশংস হামলার ঘটনায় ঢাকার মতিঝিল থানায় হামলাকারী ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো ২০০/৩০০ অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে এক মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি ২০২৫) সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা (২৭) বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখিত হামলাকারী ১৬ জন হচ্ছেন-

১। আরিফ আল খবির (৩৮), পিতা- মোঃ হোসেন আনসারী, মাতা হালিমা খাতুন, সাং- ঈদগাঁ আবাসিক এলাকা, থানা- দিনাজপুর, জেলা- দিনাজপুর, বর্তমানে ১৭/১, শাহজাহানপুর, থানা- শাহজাহানপুর, জেলা- ঢাকা; ২। মোঃ আব্বাস (২৪), পিতা- বাদশা মিয়া, সাং- কালিঘাট রোড, থানা- শ্রীমঙ্গল, জেলা- মৌলভীবাজার, বর্তমানে- রাজারবাগ মাজার শরীফ, থানা- শাহজাহানপুর, জেলা- ঢাকা; ৩। মোঃ জিয়াউল হক (২৮), সেশন- ২০১২-২০১৩, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ৪। মহিউদ্দিন রাহাত (২৩), সেশন- ২০১৯-২০২০, অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ৫। মোঃ ইয়াকুব মজুমদার (২০), সেশন-২০২১-২০২২, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ৬। শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব (৩৫), সদ্য বহিষ্কৃত সদস্য, জাতীয় নাগরিক কমিটি, ধানমন্ডি থানা প্রতিনিধি কমিটি, পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ৭। সাহিদুর রহমান (২৫), কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ৮। শওকত (২১), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা-অজ্ঞাত; ৯। রাজন হোসেন (২০), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ১০। ওয়াফী (২০), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ১১। মনোয়ার (২৪), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ১২। নুহান (২০), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ১৩। জিহাদ (২২), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ১৪। সজিব (২৫), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ১৫। আব্দুল মালেক (২৮), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত; ১৬। গোলাম আলী নাইম (২৪), পিতা- অজ্ঞাত, ঠিকানা- অজ্ঞাত।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে যে, ১৫/০১/২০২৫ তারিখে সকাল ১১.০০ ঘটিকার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য হতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুসারে (সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার) শান্তিপূর্ণ মিছিল সহকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রদক্ষিণ করে দোয়েল চত্বর, জাতীয় প্রেস ক্লাব, দৈনিক বাংলা মোড় পেরিয়ে মতিঝিলে অবস্থিত এনসিটিবি (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) ভবন এর দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

মিছিলটি আনুমানিক ১২.৫০ ঘটিকার সময় মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা জাতীয় পতাকা বাঁধা স্ট্যাম্প, লাঠি-সোটা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভূঁইফোড় সংগঠন “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি” নামে জড়ো হওয়া মৌলবাদী গোষ্ঠি জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলের উপর সন্ত্রাসী কায়দায় হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে উপর্যুপরি পেটাতে থাকে।

এজাহারে আরো বলা হয়, এতে আমি (জগদীশ চাকমা)সহ অনস্ত বিকাশ ধামাই, ডন জেব্রা, রেং ইয়ং ম্রো, জুয়েল থিওটনিয়াস, রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, টনি চিরান, ফুটন্ত চাকমাগণ সহ ১৫ জন গুরুতর আহত হয়। বর্তমানে রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, ডন জেত্রা, জুয়েল থিওটনিয়াস বাংলাদেশ স্পেশালাইসড হাসপাতাল, শ্যামলী, ঢাকায় ভর্তি হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আর অনন্ত বিকাশ ধামাই ও ফুটন্ত চাকমার মাথায় ০৬ টি করে সেলাই পড়ে চিকিৎসাধীন আছে। বাকীরা হাসপাতালে ও বাসায় চিকিৎসাধীন আছে।

মতিঝিল থানায় ধৃত আসামীদ্বয়সহ অপরাপর আসামীরা কিভাবে “সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার” উপর দেশীয় অস্ত্র, জাতীয় পতাকা মোড়ানো স্ট্যাম্প দিয়ে পেটাচ্ছে তা বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা, প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

তাছাড়াও ধৃত আসামী আরিফ আল খবির (৩৮), মোঃ আব্বাস (২৪) ও মোঃ জিয়াউল হক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যাকে উপর্যুপরি স্ট্যাম্প দিয়ে মাথায় আঘাত করে মাথায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। অনুরুপভাবে অনন্ত বিকাশ ধামাই, ফুটন্ত চাকমা, ডন জেব্রা, জুয়েল থিওটনিয়াসকে আসামীরা স্ট্যাম্প ও ইট দিয়ে আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।

উল্লেখিত ১৬ জন আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০০/৩০০ জন এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতাকে গুরুতর ও রক্তাক্ত জখম করে।

উল্লেখ্য যে, গত ১২ জানুয়ারি “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি” নামধারী একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী সংগঠনের কিছু সদস্য পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদ থেকে “আদিবাসী” শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাতিলের দাবিতে এনসিটিবির ভবন ঘেরাও করে এবং প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে ভবনে প্রবেশ করেন। ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের মারমুখী অবস্থানের প্রেক্ষিতে এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ কোন যাচাই-বাছাই না করে দাবি মেনে নেয় এবং ঐদিন রাতেই পাঠ্যপুস্তকের অনলাইন ভার্সন থেকে আদিবাসী শব্দযুক্ত গ্রাফিতি প্রত্যাহার করে নেয়।

এরপর ১৫ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চিত্রকর্ম বা গ্রাফিতি বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে এবং পাঠ্যপুস্তকের প্রচ্ছদে উক্ত আদিবাসী শব্দযুক্ত গ্রাফিতির বহাল রাখার দাবিতে ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচীর ডাক দেয় সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা। সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলটি এনসিটিবি সামনে পৌঁছলে আদিবাসী ছাত্র-জনতার উপর ‘ষ্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ এর মুসলিম বাঙালি সেটেলার ও মৌলবাদী গোষ্ঠী রড, লাঠিসোটা, ক্রিটেক স্টাম্প, ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে।

Tags: , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

উন্নয়ন বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান অনুপ কুমার চাকমা
আদিবাসী ছাত্রদের উপর হামলায় সাভারে বিক্ষোভ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu