সিএইচটি ভ্যানগার্ড
ঢাকায় সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার উপর উগ্র জাতীয়তাবাদী, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতা।

আজ (১৭ জানুয়ারি ২০২৫) সকাল ১০ ঘটিকার সময় শহরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে সৌরভ চাকমা ও সুনয় চাকমার যৌথ সঞ্চালনায় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিনিময় চাকমার সভাপতিত্বে সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিপুল চাকমা। সংহতি বক্তব্য প্রদান করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দীন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সংসদের নেতা শুভ দেবনাথ, আদিবাসী ছাত্র নেতা সুজন চাকমা (ঝিমিট), আদিবাসী শ্রমিক নেতা অনিল চাকমা ও বাসদের চট্টগ্রাম মহানগরের ইনচার্জ আল কাদেরী জয় প্রমূখ।
বক্তারা সমাবেশ থেকে গত ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে এনসিটিবি ভবনের সামনে “স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি” নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র জনতার উপর ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান। একই সাথে হামলায় জড়িত সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। পাশাপাশি গতকাল (১৬ জানুয়ারি) সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমূখে পদ যাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশের গ্যাস, টিয়ারসেল, জল কামান ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বক্তারা বলেন স্মরণাতীতকাল থেকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীরা এ ভূখন্ডে বসবাস করে আসছেন। বাংলাদেশের ব’ও যখন ছিলনা তখন থেকেই এ অঞ্চলে আদিবাসীরা বসবাস করে আসছে, সুতরাং আদিবাসীদেরকে বহিরাগত কিংবা পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, বার্মা থেকে এসেছে বলে মিথ্যাচার করবেন না। এ ভূখন্ডের উপর যখনি কোন দুর্যোগ নেমে এসেছে তখনি এদেশের মূল জনগোষ্ঠী বাঙ্গালিদের সাথে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে আদিবাসীরা লড়াই করেছে। বাংলাদেশ বহু জাতির, বহু ধর্মের, বহু ভাষার দেশ। এদেশ একক কোন ধর্মের , একক কোন জাতির, একক কোন ভাষার দেশ নয়। সুতরাং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন। সেজন্য সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অতিদ্রুত বাস্তবায়নেরও দাবী জানান।

যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জুলাই গণ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল সেই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংবিধানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সকল জাতিগোষ্ঠীসমূহকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবী তোলা হয়। পাশাপাশি নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে আদিবাসী শব্দ সম্বলিত যে জনপ্রিয় গ্রাফিতি বাদ দেয়া হয়েছে তা পুনর্বহাল এবং পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার দাবী জানানো হয়।
উল্লেখ্য যে, গত ১২ জানুয়ারি ২০২৫ নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ২য় পত্রের পেছনের প্রচ্ছদ থেকে আদিবাসী শব্দ সম্বলিত জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রিয় গ্রাফিতি সন্ত্রাসী সংগঠন “স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি” এর প্রতিবাদের মুখে সেদিন রাতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) তাদের ওয়েবসাইটে অনলাইন ভার্সনে(পিডিএফ) পরিবর্তন আনে। এরই প্রতিবাদে গত ১৫ জানুয়ারি সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার এনসিটিবি বোর্ড ঘেরাও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে “স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি” সন্ত্রাসীরা ন্যাক্কাজনকভাবে হামলা চালিয়ে ১৮জন আদিবাসী-ছাত্র জনতাকে মারাত্মকভাবে আহত করে।