জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি সদর থানা ও পৌর কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত

খাগড়াছড়ি

সিএইচটি ভ্যানগার্ড

খাগড়াছড়িতে জনসংহতি সমিতি ৯ম খাগড়াছড়ি সদর থানা ও ৪র্থ পৌর কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নসহ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে জুম্ম জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় করুন” এই স্লোগানে আজ ১ জুলাই ২০২৪ খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী অংশুমান চাকমা। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন খাগড়াছড়ি সদর থানা বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমা।

খাগড়াছড়ি সদর থানা বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সদস্য ভোলাস ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগ্রামী সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য শ্রী আরাধ্য পাল খীসা, জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সহ-সভাপতি শ্রী কিরণ চাকমা, সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রীতি খীসা, জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি পৌর কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী শিপলু আসাম, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রীমতি ববিতা চাকমা, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী জ্ঞানপ্রিয় চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা ঝিমিট। এছাড়াও জনসংহতি সমিতি, মহিলা সমিতি, যুব সমিতি ও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী নেতা শ্রী সুশীল চাকমা। এরপর জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী মহান নেতা এমএন লারমা সহ সকল বীর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়। খাগড়াছড়ি সদর থান কমিটির পক্ষ হতে সামগ্রীক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক শ্রী কালোবরণ চাকমা এবং খাগড়াছড়ি পৌর কমিটির পক্ষ হতে সামগ্রীক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী শিপলু আসাম।

বক্তারা বলেন, আবহাওয়ার এত দুর্যোগপূর্ণ মুহুর্তেও আমরা আজকে এখানে একত্র হয়েছি আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি সফল করতে। আজকে জুম্ম জনগণের ভাগ্যকাশেও কালোমেঘ জমেছে, জুম্ম জনগণ এখন দুর্যোগপূর্ণ দিন অতিবাহিত করছে। তাই আমাদেরকে এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম আরো জোরদার করতে হবে।

শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কাজ কি? পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত হলে আমাদের দায়িত্ব কি তা আমাদের গঠনতন্ত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আজকের দিনে এসে আমি অনুভব করি যে, এমএন লারমার চিন্তাধারা কত দূরদর্শী ছিল। যে কিনা আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি কি হতে পারে তার উপর চিন্তা করে এমন একটি গঠনতন্ত্র তৈরি করেছেন, পার্টি গঠন করেছেন, সংসদে এবং সংসদের বাইরে লড়াই করেছেন, সশস্ত্র আন্দোলন করেছেন দশ ভিন্ন ভাষাভাষী জুম্ম জনগণের জন্য। যা আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে এসেও আমরা এমনটা চিন্তা করতে পারিনা। আমাদেরকে প্রগতিশীল চিন্তাধারার আলোকে নিজেদের পরিচালিত করতে হবে। গঠনতন্ত্র মোতাবেক নিজেদের পরিচালিত করতে হবে। এমএন লারমার নির্দেশিত মত ও পথের অনুশীলন-অনুকরণ করতে হবে। এমএন লারমার ক্ষমা গুণ, শিক্ষা গ্রহণের গুণ, পরিবর্তিত হওয়ার গুণ মনেপ্রাণে ধারণ করে সকল বিষয়ের, ছোট বড় সকলেরর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের মানসিকতা রাখতে হবে এবং এর পরবর্তী নিজেকে পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। সংগঠনের সাংগঠনিক নীতি হচ্ছে “ব্যক্তি সংগঠনের অধীন, সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর অধীন, নিম্নস্তর উচ্চ স্তরের অধীন এবং সমগ্র পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির অধীন”। এই সাংগঠনিক নীতির ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরুর অধীন তাই বলে এই নয় যে তারা পরাধীন কিংবা নিপীড়িত। গণতান্ত্রিক উপায়ে সংগঠন পরিচালনা এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্যই এই সাংগঠনিক নীতি।

শ্রী অংশুমান চাকমা বলেন, অধিকার বঞ্চিত জুম্ম জনগণের একমাত্র আস্থার ঠিকানা এ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি। ৭০ এর দশকে প্রতিষ্ঠার পর হতে জুম্ম জনগণের জাতীয় ও জন্মভূমির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ হয়ে বর্তমান পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করণের ষড়যন্ত্র আজও চলমান রয়েছে। যার কারণে আজকে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত যে আইন “পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি- ১৯০০” বাতিলের ষড়যন্ত্র চলছে। আজকে যুবকরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে, অনলাইনে ক্যাসিনো খেলছে, পড়াশোনা করছেনা যার কারণে আজকে জুম্ম সমাজ অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তিনি আরো আশংকা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কি আসলেই নিজেদের আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি কিনা”! আজকে সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে পড়াশোনার বিষয়টা একদম কমে গিয়েছে, তা সে উচ্চ হতে নিম্নস্তর পর্যন্ত। আজকে আমাদেরকে দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি, ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ের উপর নিজেদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। পাশাপাশি জুম্ম জনগণের কাছাকাছি থেকে তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে সার্বক্ষণিক সঠিক দিশা দেখানোর কাজটা করতে হবে।

সর্বশেষে জেএসএস খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটি ও পৌর কমিটির প্যানেল উপস্থাপন শপথ বাক্য পাঠ করান জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সংগ্রামী সভাপতি শ্রী শোভা কুমার চাকমা। উত্থাপিত প্যানেলের উপর কারো কোন আপত্তি না থাকায় শ্রী সুনীল চাকমাকে সভাপতি, শ্রী ভোলাস ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী রাজ্যময় চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটি ২১ সদস্য বিশিষ্ট এবং শ্রী নিউটন তালুকদারকে সভাপতি, শ্রী নির্মল দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী তনয় চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট খাগড়াছড়ি পৌর কমিটি গঠন করা হয়।

Tags: , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

জনসংহতি সমিতি বাঘাইছড়ি থানা কমিটির ৭ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu