সিএইচটি ভ্যানগার্ড
আজ ২ ডিসেম্বর ২০২২ ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি। ১৯৯৭ সালের আজকের এই দিনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে গঠিত জাতীয় কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিও হলে শান্তি চুক্তি নামে সমধিক পরিচিত।
চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, জুম্ম জনতার মুক্তি- আর নয় কালক্ষেপণ অনতিবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক” এই স্লোগানে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মহালছড়ি উপজেলার ক্যায়াংঘাট ইউনিয়নের করল্যাছড়ি হাই স্কুল মাঠে জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে এক বিশাল গণ সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে অতিসত্বর রোডম্যাপ বা কর্ম পরিকল্পনা ঘোষণার দাবী জানান জনসংহতি সমিতির নেতারা।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার জুম্ম জনতা সমাবেশ স্থলে জড়ো হতে থাকে এবং প্রায় ১৫ হাজার জুম্ম জনতার উপস্থিতিতে সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জনসংহতি সমিতির খাগড়াছড়ি সদর থানা কমিটির সভাপতি শ্রী প্রত্যয় চাকমার সঞ্চালনায় গণ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহান পার্টি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাধারণ, ২ ডিসেম্বর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান শ্রী বিমল কান্তি চাকমা। গণ সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সুযোগ্য তথ্য ও প্রচার সম্পাদক শ্রী সুধাকর ত্রিপুরা। এছাড়াও গণ সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সুযোগ্য সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রণব চাকমা, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক শ্রী সাথোয়াই মারমা; জনসংহতি সমিতি খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী প্রীতি খীসা, মহিলা সমিতির কেন্দ্রীয় সভানেত্রী শ্রীমতি কাকলী খীসা, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী জ্ঞান প্রিয় চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট) প্রমূখ। সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বন্ধু প্রতীম সংগঠন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর কেন্দ্রীয় নেতা শ্রী অমল চাকমা।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শ্রী বিভূরঞ্জন চাকমা, আইন বিষয়ক সম্পাদক ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের সুযোগ্য চেয়ারম্যান শ্রী সুদর্শন চাকমা, এছাড়াও সমাবেশে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৭ সালের ০২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীর মধ্যেকার রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান হয় এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে। কিন্তু পার্বত্য চুক্তির কিছু কিছু ধারা বাস্তবায়িত হলেও মৌলিক ও অধিকাংশ ধারা আজও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। বিশেষ করে চুক্তির মৌলিক ধারাগুলোকে অবাস্তবায়িত করে রাখা হয়েছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে আজও শান্তি ফিরে আসেনি। এই চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের কথা থাকলেও সরকারের সদিচ্ছার অভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজমান রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর যেমনি শান্তবাহিনীর সদস্যদের ৪৫ দিনের মধ্যে অস্ত্র জমাদানের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছিল ঠিক তেমনি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচি নির্ধারণের দাবী জানানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভূমি সমস্যা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ভূমি সমস্যা নিরসণে ভূমি কমিশন গঠিত হলেও দীর্ঘ ২৫ বছর যাবত নানা তালবাহানা করে যাচ্ছে এবং এত বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি ভূমি সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি বলেও বক্তারা অভিযোগ করেন। আওয়ামীলীগ সরকার দীর্ঘ সময় ধরে চুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের সময় জুম্ম জনগণকে বোকা বানিয়ে ভোটগুলো নিয়ে নিচ্ছে। তাই বক্তারা আর কালক্ষেপণ না করে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য সরকারের নিকট আহ্বান জানান। আওয়ামীলীগ সরকার বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আদৌতে চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫টি বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৮টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, অবশিষ্ট ২৯টি সম্পূর্ণভাবে অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে। সর্বোপরি চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ সম্পূর্ণ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে।
শ্রী বিমল কান্তি চাকমা অভিযোগ করে বলেন, আজকের গণ সমাবেশ খাগড়াছড়ি সদরের কোন এক বড় খোলা মাঠে হতে পারতো- তার জন্য আমরা প্রশাসনিক বিভিন্ন কথাবার্তা এবং অনুমোদন চেয়েছি কিন্তু বিশেষ একটি মহলের ব্যাপক বিরোধীতা ও ষড়যন্ত্রের কারণে তা সম্ভব হয়নি। বিমল কান্তি চাকমা বলেন আজকে আমাদেরকে আমাদের দুঃখের কথা, আমাদের মনের কথা, আমাদের বেদনার কথা বলতে দেয়া হচ্ছেনা। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে, পরবর্তী যদি কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে এর দায় তাদেরকেই নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। এবং যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবী জানান। পরিশেষে আগামী দিনের চুক্তি বাস্তবায়ন ও জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামে জুম্ম জনগণকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।