খাগড়াছড়িতে শহীদ সুদীর্ঘ চাকমাসহ তিন সহযোদ্ধাকে পিসিপি’র যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ

খাগড়াছড়িপার্বত্য চট্টগ্রাম

সিএইচটি ভ্যানগার্ড,খাগড়াছড়ি

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ সুদীর্ঘ চাকমা, পিসিপি দীঘিনালা সরকারি কলেজ কমিটির সাবেক সভাপতি শহীদ সুখেন চাকমা, পিসিপি দীঘিনালা সরকারি কলেজ কমিটির সাবেক কর্মী শহীদ গুনেন্দু চাকমা ও সাবেক যুব নেতা শহীদ জীবন চাকমার ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অস্থায়ী শহীদ ভেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

আজ সকাল (১২ই মার্চ ২০২৩) ১০ ঘটিকার সময় খাগড়াছড়ি সদরের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা কার্যালয় প্রাঙ্গনে অস্থায়ী শহীদ ভেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার আনুষ্ঠানিকতা আরম্ভ হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ জনসংহতি সমিতি, মহিলা সমিতি, যুব সমিতি ও পিসিপি’র বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেন। অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পন শেষে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট মৌনব্রত পালন করা হয়।

স্মরণসভায় বক্তারা সুদীর্ঘ চাকমার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বক্তারা বলেন, সুদীর্ঘ চাকমা শুধু জনসংহতি সমিতি’র নেতা ছিলেন না পার্বত্য চট্টগ্রামের মেহনতি জুম্ম জনগণের সম্ভাবনাময়ি এক উদীয়মান নেতা ছিলেন। সুদীর্ঘ চাকমা তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নে। এরপর তিনি যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে জড়িত হন একসময় তিনি পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন। বিশেষ করে তিনি পাহাড়ের ছাত্র-যুবদের কাছে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। তার অমায়িক আচরণ, গোছালো বক্তব্য ও সাংগঠনিক দক্ষতা-যোগ্যতা তাকে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছিল। জনসংহতি সমিতির বিভক্তির পর পাহাড়ের ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত যখন চরমে তিনিই বোধয় সেই ব্যক্তি যিনি অত্যাধিক বেশি কথা বলেছেন এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে। তিনিই সর্বাধিক আওয়াজ তুলেছিলেন এই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে। যে মানুষটা সর্বাধিক কথা বলেছিলেন ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বিরুদ্ধে সেই মানুষটার প্রাণই গেল সেই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে।

তরুণদের মাঝে তার জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ ছিল তিনি নিজেই দেয়ালে দেয়ালে ছিকা মারতেন, পোস্টার টাঙাতেন, ব্যানার লিখতেন এবং অনুজদের এসব শেখাতেন। তার মাঝে কখনো নেতার ভাব ছিলনা, সাধামাটা জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন সুদীর্ঘ চাকমা।

বক্তারা আরো বলেন, তার জীবিতকালীন সময়ে ইউপিডিএফের ছাত্র সংগঠন, মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামসহ বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে কাঁধেকাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হত। তার আচরণ-ব্যবহার এসব সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কর্মসূচীতে একাত্মা হয়ে অংশগ্রহণ করতেন। তার এসব বিভিন্ন গুণাবলির কারণে তিনি আজও প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে রয়েছেন।

সন্ধ্যায় পিসিপির নেতাকর্মীরা শহীদদের অস্থায়ী শহীদ ভেদীতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন এবং শহীদদের রক্ত যাতে বৃথা না যায় দৃপ্ত শপথ নেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা।

উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালের ১২ই মার্চ রাঙ্গামাটি জেলার লংগদুতে সাংগঠনিক সফরে গিয়ে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি’র সশস্ত্র ক্যাডারদের ব্রাশফায়ারে দজর পাড়া এলাকায় নির্মমভাবে শহীদ হন সুদীর্ঘ চাকমাসহ তার তিন সহযোগী।

Tags: , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

পানছড়িতে সুদীর্ঘ চাকমা ও তার তিন সহযোদ্ধার ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
জেএসএস নেতা সুদীর্ঘ চাকমা ও তার তিন সহযোদ্ধার ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu