মিথ্যা মামলায় আটক রিংরং ম্রো’র নি:শর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ

খাগড়াছড়িসংবাদ বিজ্ঞপ্তি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় আটক রিংরং ম্রোর মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

খাগড়াছড়ি সদরস্থ মহাজন পাড়ায় বিকাল ৩.০০ ঘটিকার সময়ে মিছিলটি শুরু হয়ে চেঙ্গি স্কোয়ারে এসে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মৃনাল চাকমার সভাপতিত্বে পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য জেসলেন চাকমার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য শুভরণ চাকমা। সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুনেন্টু চাকমা, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমতি বিকাশ চাকমা, হিল ইউমেন্স ফেডারেশন নেত্রী নৈতিকা চাকমা প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বান্দরবানের লামা উপজেলার ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতা রিংরং ম্রোকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সন্ধ্যায় সরই ইউনিয়নের লাংকম পাড়ায় সিভিল পোশাকে আসা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করে নিয়ে যান।

বক্তারা অভিযোগ করেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক সাজানো মিথ্যা মামলার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের জমি দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন তিনি। ভূমি রক্ষায় তার সক্রিয় ভূমিকার কারণেই তাকে টার্গেট করা হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

বক্তারা আরও বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জমি দখল, উচ্ছেদ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, ফসল ধ্বংস এবং লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলা চালানোর মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।

বক্তারা আরও বলেন, অভিযোগকারী ৭ এপ্রিলের ২০২৪ যে ঘটনা উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে পাড়াবাসীরা জানিয়েছেন। মূলত পাড়াবাসীদের ভোগদখলীয় ৪০০ একর ভূমি জবরদখল করে তাদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদের লক্ষ্যেই এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক লামা সরই ইউনিয়নের রেংয়েন ম্রো কার্বারি পাড়া, লাংকম ম্রো কার্বারি পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের ভোগদখলীয় ৪০০ একর জুমভূমি বেদখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারই অংশ হিসেবে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পাড়াবাসীদের জুমভূমি, ফসল পুড়িয়ে দেয়া, বাগান কেটে দেয়া, পানির উৎস ঝিড়িতে বিষ প্রয়োগ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর, বৌদ্ধ বিহার ভাঙচুর. মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ নানা উৎপীড়ন চালানো হচ্ছে তিন পাড়াবাসীর উপর।

এর বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত হলেও সরকার-প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, পাড়াবাসীরা কোন বিচার পায়নি।

বিগত সময়ে এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সংসদীয় প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা আশ্বাস প্রদান করলেও পাড়াবাসীরা কোন প্রতিকার পায়নি। উল্টো প্রশাসন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ভূমিদস্যু রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজনকে সহযোগিতা দিয়ে পাড়াবাসীদের হয়রানি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উল্টো প্রশাসন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ভূমিদস্যু রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজনকে সহযোগিতা দিয়ে পাড়াবাসীদের হয়রানি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বান্দরবানের লামা উপজেলা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলারদের জন্য সবচেয়ে বেশি জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পার্বত্য চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে এখানে রাবার কোম্পানিগুলোর ভূমি দখল ও আদিবাসীদের উচ্ছেদ এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ ও ২০২৩ সাল থেকেই লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে একাধিক হামলা ও ভূমি দখলের অভিযোগ উঠে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে লাংকম পাড়া, রেংয়েন ম্রো কারবারি পাড়া ও জয়চন্দ্র কারবারি পাড়ায় ৪০০ একর জুমভূমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রেংয়েন কারবারি পাড়ায় ট্রাকভর্তি লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়, যার মধ্যে তিনটি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। হামলার সময় স্থানীয়দের মারধর করা হয় এবং অন্তত ১০টি ঘর ভাঙচুর করা হয়। স্থানীয়দের পানির উৎসেও বিষ মেশানোর অভিযোগ ওঠে, যা আদিবাসীদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রির এই অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় ম্রো-ত্রিপুরা পাড়াবাসীরা ভূমি বেদখলের প্রতিবাদ করতে গেলে বেদখলকারী লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে মো. আব্দুল মালেক (৪০) নামের এক ব্যক্তি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন (ধারা-১৪৩/৪২৭/৪৩৫/৪৩৬ ও ৫০৬ (২) দন্ডবিধি)। বিগত ২২ এপ্রিল ২০২৪ লামা উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রাবার বাগান ক্ষতিগ্রস্ত করার মিথ্যা অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়।

এর আগেও একইভাবে মামলা দায়ের করে পাড়াবাসীদের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

Tags: , , , , ,

এই সম্পর্কিত আরও পোস্ট

রিংরং ম্রো’র মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকায় মিছিল ও সমাবেশ
মতিঝিলে আদিবাসী ছাত্র-জনতার উপর হামলার অন্যতম আসামি স্বপন নারায়ণগঞ্জে আটক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Fill out this field
Fill out this field
Please enter a valid email address.
You need to agree with the terms to proceed

Menu