সিএইচটি ভ্যানগার্ড,
খাগড়াছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার উদ্যোগে কলেজের (২০২৩-২৪) শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নবীণ বরণ, এবং ৭ম কলেজ ও ১০ম খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখার যৌথ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ(১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) সকাল ১০ ঘটিকার সময় “পাহাড় তোমায় ডাকছে দাও এবার সাড়া, বাঁচতে হলে ভাঙতে হবে অন্ধকারের কারা” এই স্লোগানে খাগড়াছড়ি সদরের মহাজন পাড়াস্থ সূর্যশিখা ক্লাব প্রাঙ্গনে নবীণ বরণ ও যৌথ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন আজকের অনুষ্ঠানের সংগ্রামী প্রধান অতিথি জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী অংশুমান চাকমা এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখার সভাপতি ও আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি শ্রী সচেতন চাকমা।
নবীণ বরণ ও কাউন্সিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেওএসএস খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রীতি খীসা, যুব সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী প্রতিভাস চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শ্রী সুজন চাকমা (ঝিমিট), পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রী সুভাষ চাকমা প্রমূখ। অতিথিদের ব্যাজ ও উত্তরীয় পরিধাণ করিয়ে বরণ করে নেওয়ার পর নবাগত শিক্ষার্থীদের ফুল ও কলম দিয়ে বরণ উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শ্রী অংশুমান চাকমা। এরপর সবাইকে একটি একটি ফুলের স্টিক দিয়ে পিসিপি’র পক্ষ থেকে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপর নবাগত শিক্ষার্থীদের মানপত্র পাঠের মাধ্যমে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়। মানপত্র পাঠ করেন শ্রীমতি রুপা চাকমা।
বক্তারা বলেন, বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক সেই সাথে সামগ্রীক পরিস্থিতিও। জুম্ম সমাজকে শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে সচেতন ছাত্র সমাজকেই হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে। কুসংস্কারাচ্ছন্ন জুম্ম সমাজকে সচেতন করতে হবে। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। পার্বত্য চট্টগ্রামে আজকে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভালো পাঠদান পাচ্ছেনা। বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকুরী ক্ষেত্রে আদিবাসীদের ক্ষেত্রে যে ৫% কোটা বরাদ্ধ ছিল তাও বাতিল করা হয়েছে ফলে সাধারণ জুম্ম শিক্ষার্থীরা এদেশের মূল জনগোষ্ঠীর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারছেনা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল, জুম্ম নারীদের উপর শ্লীলতাহানি, ধর্ষণসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণকে জাতিগতভাবে নিশ্চিহ্ন করণের ষড়যন্ত্র চলমান রয়েছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন। আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রণয়নের কথা থাকলেও যথাযথভাবে আজো বাস্তবায়ন হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে দীর্ঘ ২৬বছরের অধিক সময় ধরে অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আজকে সারাদেশে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, শুধুমাত্র চাকরির আশায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করলে হবেনা, পাশাপাশি কারিগড়ি শিক্ষা ও উদ্যোক্তা হতে হবে বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন। সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের জাতীয় ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণের জন্য, ধর্ষণমুক্ত সমাজ গঠন, নেশামুক্ত সমাজ গঠন, দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠন, জুম্ম সমাজে শিক্ষার বিস্তার ঘটানো এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে বলে বক্তারা ব্যক্ত করেন।
সবশেষে শ্রী ধনঞ্জয় ত্রিপুরাকে সভাপতি, শ্রী উশিমং মারমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী ইমন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট পিসিপি খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখা এবং শ্রী সবুজ চাকমাকে সভাপতি, শ্রী শ্রাবণ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও শ্রী ধয়ন ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করশ ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পিসিপি খাগড়াছড়ি সদর থানা শাখা গঠন করা হয়।
নবাগত কমিটিগুলো প্যানেল উপস্থাপন ও শপথবাক্য পাঠ করান পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সংগ্রামী সভাপতি শ্রী মৃনাল চাকমা। সর্বশেষে অনুষ্ঠানের সভাপতি শ্রী সচেতন চাকমার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আজকের নবীণ বরণ ও যৌথ কাউন্সিল সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।